[ প্রভার্টি রিলিফ সোসাইটি।।]
উপজাতিদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার উন্নতি কল্পে স্বামী বাউলানন্দের উদ্যোগে প্রভার্টি সার্ভিস সংগঠন প্রতিষ্ঠা হোল । এটা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার এক বছর পরে নদীর অপর পাড়েও এর কাজ শুরু হোলো । শবরী নদীর দুই ধারের অভ্যন্তরভাগে এই সংস্থা কতক গুলি কুপ(coup)গ্রহণ করল ‌। এই সংগঠনের অধীনে বহু কর্মচারী নিযুক্ত হোলো। এই কর্মচারীরা মাথায় নীল রঙের টুপি পরতো এবং তাতে ‘ওঁ’ লেখা থাকতো। ওই এলাকার সব গ্রামের নিজস্ব নৌকা থাকতো, আর সব নৌকাতেই ওঁ’ লেখা থাকতো । এই সংগঠনের নিজস্ব পতাকা ছিল। পতাকার রং ছিল সাদা। এর একদিকে স্বস্তিক, ওঁ এবং অগ্নি চিহ্ন, অপরদিকে ক্রুশ এবং অর্ধচন্দ্র । উভয় দিকের চিহ্নের রং ছিল লাল । P.R.S(Poverty Relief Society)-এর পতাকা মাস্তুলে নিয়ে নৌকা নদীর বুকের উপর দিয়ে চলতো।
উপজাতিরা এই সংগঠনকে সাদরে গ্রহণ করলো । তাদের মজুরি বৃদ্ধি হোল, তাদেরকে নগদ টাকা দেওয়া শুরু হোল । কোনরকম লাভ না রেখে সংগঠন তাদের খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ এবং বস্ত্র বিতরণ করতো। ঔষধ সংক্রান্ত সমস্ত সুযোগ সুবিধা এবং নিরাপত্তার আশ্বাস __এই সমস্ত সুযোগ সুবিধা পেয়ে উপজাতিরা নিজেদেরকে সংগঠনের সঙ্গে ‘একত্ব’ অনুভব করতে লাগলো।
তারা নিজেদের ইচ্ছামত বনের কাজে যেতে লাগলো । এতে ওদের খুবই উপকার হোলো। এদেরকে দিয়ে জোর করে কাজ করানোর আর কোনো ব্যাপারই রইলোনা। ঋণের বোঝা এবং ঋণের ফলে সৃষ্ট কোনো রকম দাসত্বভাব‌ও তাদের মধ্যে রইলো না। মজুরিও তারা পুরোপুরি পেতে লাগলো। অর্জিত অর্থের দ্বারা যথেষ্ট পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য পাওয়া সম্ভব হোল । ফলে এই উপজাতির লোকেরা খেয়েদেয়ে সুখে স্বাচ্ছন্দে দিন কাটাতে লাগলো।
P.R.S সংগঠন নিজাম রাজ্যের এবং ব্রিটিশ সরকারের অধীনে সরকারি কর্মচারীদের সহানুভূতি এবং পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করলো। তখনকার ওই দুঃসময়ে শহরবাসীর পক্ষে যখন খাদ্যদ্রব্য পাওয়া দুষ্কর হয়ে দাড়ালো তখন P.R.S 150 ব্যাগ চালের কোটা পেতো। এর ফলে উপজাতিরা যথেষ্ট পরিমাণে চাল পেতে লাগলো ।
ওই অঞ্চলের রেড্ডিরা আর কাউকে পরোয়া করতো না । কোনো ডিপার্টমেন্টের অধস্তন কর্মচারীদের পক্ষে সম্ভব ছিল না তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে বা তাদেরকে দিয়ে বিনা পয়সায় কাজ করাতে ! এখন যদি কেউ তাদেরকে কাজ করতে বলত, তারা তাকে জিজ্ঞাসা করতো_” কত মজুরি দেবেন?” এবং _”কবে মজুরী দেবেন? _ ইত্যাদি ইত্যাদি এখন আর ওদের দ্বারা বিনা পয়সায় কাজ করিয়ে নেওয়া সম্ভব ছিল না । এখন তারা রোজ স্নান করে দুবেলা মন্দিরে যাওয়া আসা করে। এদের এই বিরাট পরিবর্তন অনেকেরই তখন আশ্চর্য লেগেছিল!
স্বামীজি কোথা হোতে টাকা পাচ্ছেন?__ এ প্রশ্নের জবাব কিন্তু কেউই পেত না ! এই রহস্য উদঘাটনের জন্য অনেকেই অনেক কথা বলাবলি করতে লাগলো। অনেকে বলতে লাগলো স্বামীজী দেওয়ালের মধ্যে গর্তে হাত দিয়ে সেখান থেকে মায়াবলে টাকা তুলে আনেন !
কিন্তু নতুন নোট তিনি কোথায় পাচ্ছেন! কেউ বোলতো_”যেহেতু স্বামীজী জগদম্বার ভক্ত, সেইহেতু টাকা বানানো তার পক্ষে সম্ভব হোচ্ছে। “কিছুদিন পর এই সমস্ত টাকা মিলিয়ে যাবে”__ এই সমস্ত গুজব আবার জনগণের মধ্যে আতংক সৃষ্টি করলো। কেউ কেউ বলতে লাগলো__ স্বামীজী “সুবর্ণ যোগ” জানেন ! এই যোগের দ্বারা যে স্বর্ণমুদ্রা তিনি তৈরি করেন, তা বিক্রি করে টাকা আনেন।” কেউ কেউ বলতে লাগল স্বামীজী নিজেই নোট ছাপাচ্ছেন।
🎉 যখন অলস প্রকৃতির লোকেরা এই সমস্ত গুজব রটাতে লাগলো __তখন পুলিশ ডিপার্টমেন্ট অন্য ধরনের গল্প বানাতে লাগলো।।(ক্রমশঃ)