শ্রী শ্রী গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের লেখা ”সহজতা ও প্রেম” গ্রন্থে ‘প্রেম’ বিষয়ক আলোচনা এখানে তুলে ধরা হচ্ছিলো। আমরা আগের দিন যতদূর পর্যন্ত তুলে ধরেছিলাম, আজ তারপর থেকে শুরু করা যাক্। গুরুমহারাজ ‘প্রকৃত ভালবাসা’ কি_এই সম্বন্ধে বলতে গিয়ে বললেন – ” প্রিয় আত্মন্ – ভালোবাসা মানবের এক মধুর বৃত্তি। ভালোবাসা ছাড়া মানব বাঁচতে পারে না। একমাত্র ভালোবাসাতেই মানব_মানবকে আপনজন বলে বোধ করে, তখন কেউ আর পর থাকে না। ভালোবাসার দ্বারাই ভেদজ্ঞানের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে সবকিছুই আনন্দময় হয়ে ওঠে।”
মানুষের নানান বৃত্তি রয়েছে, নানান প্রবৃত্তিও রয়েছে – কিন্তু গুরুমহারাজ বললেন – ” ভালোবাসা হোলো মানুষের মধুর বৃত্তি !” তাছাড়া উনি বললেন – ” ভালোবাসা ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না।” এই কথাটার মানে দু’রকম ভাবে ভাবা যেতে পারে। প্রথমটা হোলো – এই পৃথিবীতে যত মানুষেরা বেঁচে আছে তাদের প্রত্যেকের মধ্যেই ‘ভালোবাসা’ এই বৃত্তিটা অল্পমাত্রায় হোলেও বর্তমান ! প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যেই – তাতে কোনো ব্যক্তি যত নিষ্ঠুরই হোক বা সে যত বড় ক্রিমিনালই হোক ! আর দ্বিতীয় মানেটা হোতে পারে – প্রকৃত ভালোবাসা সেই সমস্ত মানুষের মধ্যেই প্রকটিত – যে বা যারা প্রকৃত অর্থে ‘মানুষ’ পদবাচ্য ! অর্থাৎ সেই সমস্ত ব্যক্তি__ যাদের মধ্যে ‘মান’ এবং ‘হুঁশ’ বিদ্যমান (এই সজ্ঞাটা অবশ্য ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের দেওয়া সংজ্ঞা অনুযায়ী, আর গুরুমহারাজের কথা অনুযায়ী সেই সমস্ত মানুষ যাদের মধ্যে ‘বিবেক’ জাগ্রত) !
এসব কথা থাক, এরপরে গুরুমহারাজ কি বলেছেন সেটা এবার দেখে নেয়া যাক্। গুরুমহারাজ বললেন – ” ভালোবাসা মানবের স্বভাবজ ধর্ম, তা ক্রমবর্ধমান। ভালোবাসার অনুশীলনে মানব বিশুদ্ধ প্রেমিকে রূপান্তরিত হয়। আবার এর অভাবে মানব পশু অপেক্ষাও হীন হয়ে পড়ে।”
পাঠকবৃন্দ ! তাহলে বুঝতে পারা গেল তো –একটু আগে কেন ‘ভালোবাসার সাথে মানুষের বেঁচে থাকা’-র দু’রকম অর্থ করার চেষ্টা করা হয়েছিল ! গুরুমহারাজ বললেন – “প্রেম মানুষের স্বভাবজঃ ধর্ম এবং যা শুধুই বেড়ে যায়”– কিন্তু তার অনুশীলন করতে হয়। অনুশীলনের ফলে এই স্বভাবধর্মের আরও উৎকর্ষতা লাভ হয়। অপরপক্ষে অনুশীলনের অভাবে মানুষ প্রেমহীন হয়ে যায়, ফলে সে পশু অপেক্ষাও হীন অবস্থা প্রাপ্ত হয়। আর অধিকাংশ মানবের এই রূপটাই সমাজে এখন পরিলক্ষিত হোচ্ছে। মানবের ভোগ-লালসা, ইন্দ্রিয়-লালসা এতো প্রবল হয়ে উঠছে যে, পশুরাও এইসব মানুষকে দেখে লজ্জা পেতে পারে ! কেন না_ রাত্রিবেলার শেষ বাসে বাড়িতে ফেরার পথে, কোনো একাকী মহিলাকে কয়েকজন বিষম বয়সের পুরুষ (যার মধ্যে গাড়ির চালক রয়েছে, এমনকিএকজন কিশোরও রয়েছে) সকলে মিলে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে, নির্মমভাবে তাকে মেরে ফেলছে(কয়েক বছর আগের দিল্লির ঘটনা, কিন্তু এইরকম ঘটনা প্রায় সব জায়গাতেই আখছার ঘটে চলেছে !) – এই ঘটনাটাকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন বলুন তো !!
সভ্য সমাজের মানবের এইরূপ মানসিক অবস্থা ?? পশুরা যদি নিজেদের ভাষা মানবের কাছে প্রকাশ করতে পারতো – তারা যে এই ধরনের ঘটনায় কতটা লজ্জিত__ সেটাই প্রকাশ করতো না কি !!! একসাথে অনেকগুলো পুরুষমানুষ যেখানে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও – সেখানে কারোর মধ্যে এতোটুকু বিবেকের জাগরন ঘটলো না ? কারও মনে হোলো না যে, একজন অসহায় নারীকে নিরাপদে তার নিজের বাড়ি পৌঁছে দেওয়াটাই একজন পুরুষ মানুষের প্রধান কর্তব্য ? সবার মধ্যে একসাথে নারী-লোলুপতা জেগে উঠলো !!!! এইসব ঘটনা সভ্যতার লজ্জা, মানবসমাজের লজ্জা, শিক্ষার লজ্জা, রাজনীতি-ধর্মনীতি-সমাজনীতি-প্রশাসনের লজ্জা !!
যাইহোক, মন খারাপ কথা, অজ্ঞানী-আহাম্মক মানবের মানসিক অবস্থার কথা এখন থাক্। কারণ, গুরুমহারাজ তো বলেই দিয়েছেন – ” পৃথিবী গ্রহটাই এখনো কয়েক লক্ষ-কোটি বছরের শিশু ! এখানকার মানুষের মানসিকতা যেন সবে হামাগুড়ি অবস্থা থেকে টলমল পায়ে উঠে দাঁড়াতে শিখেছে !” সুতরাং পৃথিবীর মানুষ তো চেতনায় একেবারে শিশু অবস্থাতেই রয়েছে, এইজন্যেই তো মহাজনগণ মানবকে অজ্ঞান, আহাম্মক, অবোধ বলে গেছেন। আর গুরুমহারাজের কথায় “অবোধের গোবধে আনন্দ!” অর্থাৎ অবোধ অবস্থার, অজ্ঞান অন্ধকারে থাকা অবস্থার মানব__ ভয়ঙ্কর অন্যায় কার্য্যও হাসতে হাসতে করতে পারে। তাই আমরা এইসব কথা বাদ দিয়ে আবার গুরুমহারাজের কথায় ফিরে যাই।
গুরুমহারাজ বললেন – ” ভালোবাসা ক্রমে ক্রমে ক্ষুদ্র স্বার্থবেষ্টনী অতিক্রম করে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। সংসারের যাবতীয় প্রতিকূলতা একমাত্র ভালোবাসার কাছেই পরাজিত। ভালবাসার কোনো আড়ম্বর নাই। এতেই জগৎ-সংসার ‘আনন্দনিকেতন’ বোধ হোতে থাকে।”
গুরুমহারাজ নিজে ছিলেন মহাপ্রেমিক, পরমপ্রেমিক – অপার্থিব প্রেমধনের অধিকারী। গুরুমহারাজের সান্নিধ্যে যে সমস্ত মানুষজনেরা এসেছিলেন তারা সকলেই একথা একবাক্যে স্বীকার করবেন যে, ” বাবাঠাকুর বা গুরুজীর কাছ থেকে যে ভালোবাসা পেয়েছিলাম, তা বাবা-মায়ের কাছেও কোনোদিন পাই নি !” পুরুষভক্তেরা গুরুজীকে এমন কথা বলতো, যা তার স্ত্রীকেও বলে নি ! আবার বহু নারীভক্তেরা গুরুমহারাজকে এমন সব কথা বলতো, যেগুলি তারা কোনোদিন তার স্বামীকেও বলতে পারে নি ! গুরুমহারাজের কাছ থেকেই আমরা এসব কথা শুনেছিলাম। গুরু মহারাজের জীবনের ঘটনাহমূহ পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় তাঁর সমগ্র জীবনের সমস্ত ঘটনাবলিই ছিল মানব-শিক্ষার জন্য ! সুতরাং আমরা(পরমানন্দ ভক্তরা) সেই সময় একটা সিদ্ধান্তে এসেছিলাম যে, “আমার জীবনই আমার বাণী”– একথা একমাত্র ভগবানেরই বলা সাজে – বাকিদের বলা বাতুলতা মাত্র !
মানুষের নানান বৃত্তি রয়েছে, নানান প্রবৃত্তিও রয়েছে – কিন্তু গুরুমহারাজ বললেন – ” ভালোবাসা হোলো মানুষের মধুর বৃত্তি !” তাছাড়া উনি বললেন – ” ভালোবাসা ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না।” এই কথাটার মানে দু’রকম ভাবে ভাবা যেতে পারে। প্রথমটা হোলো – এই পৃথিবীতে যত মানুষেরা বেঁচে আছে তাদের প্রত্যেকের মধ্যেই ‘ভালোবাসা’ এই বৃত্তিটা অল্পমাত্রায় হোলেও বর্তমান ! প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যেই – তাতে কোনো ব্যক্তি যত নিষ্ঠুরই হোক বা সে যত বড় ক্রিমিনালই হোক ! আর দ্বিতীয় মানেটা হোতে পারে – প্রকৃত ভালোবাসা সেই সমস্ত মানুষের মধ্যেই প্রকটিত – যে বা যারা প্রকৃত অর্থে ‘মানুষ’ পদবাচ্য ! অর্থাৎ সেই সমস্ত ব্যক্তি__ যাদের মধ্যে ‘মান’ এবং ‘হুঁশ’ বিদ্যমান (এই সজ্ঞাটা অবশ্য ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের দেওয়া সংজ্ঞা অনুযায়ী, আর গুরুমহারাজের কথা অনুযায়ী সেই সমস্ত মানুষ যাদের মধ্যে ‘বিবেক’ জাগ্রত) !
এসব কথা থাক, এরপরে গুরুমহারাজ কি বলেছেন সেটা এবার দেখে নেয়া যাক্। গুরুমহারাজ বললেন – ” ভালোবাসা মানবের স্বভাবজ ধর্ম, তা ক্রমবর্ধমান। ভালোবাসার অনুশীলনে মানব বিশুদ্ধ প্রেমিকে রূপান্তরিত হয়। আবার এর অভাবে মানব পশু অপেক্ষাও হীন হয়ে পড়ে।”
পাঠকবৃন্দ ! তাহলে বুঝতে পারা গেল তো –একটু আগে কেন ‘ভালোবাসার সাথে মানুষের বেঁচে থাকা’-র দু’রকম অর্থ করার চেষ্টা করা হয়েছিল ! গুরুমহারাজ বললেন – “প্রেম মানুষের স্বভাবজঃ ধর্ম এবং যা শুধুই বেড়ে যায়”– কিন্তু তার অনুশীলন করতে হয়। অনুশীলনের ফলে এই স্বভাবধর্মের আরও উৎকর্ষতা লাভ হয়। অপরপক্ষে অনুশীলনের অভাবে মানুষ প্রেমহীন হয়ে যায়, ফলে সে পশু অপেক্ষাও হীন অবস্থা প্রাপ্ত হয়। আর অধিকাংশ মানবের এই রূপটাই সমাজে এখন পরিলক্ষিত হোচ্ছে। মানবের ভোগ-লালসা, ইন্দ্রিয়-লালসা এতো প্রবল হয়ে উঠছে যে, পশুরাও এইসব মানুষকে দেখে লজ্জা পেতে পারে ! কেন না_ রাত্রিবেলার শেষ বাসে বাড়িতে ফেরার পথে, কোনো একাকী মহিলাকে কয়েকজন বিষম বয়সের পুরুষ (যার মধ্যে গাড়ির চালক রয়েছে, এমনকিএকজন কিশোরও রয়েছে) সকলে মিলে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে, নির্মমভাবে তাকে মেরে ফেলছে(কয়েক বছর আগের দিল্লির ঘটনা, কিন্তু এইরকম ঘটনা প্রায় সব জায়গাতেই আখছার ঘটে চলেছে !) – এই ঘটনাটাকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন বলুন তো !!
সভ্য সমাজের মানবের এইরূপ মানসিক অবস্থা ?? পশুরা যদি নিজেদের ভাষা মানবের কাছে প্রকাশ করতে পারতো – তারা যে এই ধরনের ঘটনায় কতটা লজ্জিত__ সেটাই প্রকাশ করতো না কি !!! একসাথে অনেকগুলো পুরুষমানুষ যেখানে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও – সেখানে কারোর মধ্যে এতোটুকু বিবেকের জাগরন ঘটলো না ? কারও মনে হোলো না যে, একজন অসহায় নারীকে নিরাপদে তার নিজের বাড়ি পৌঁছে দেওয়াটাই একজন পুরুষ মানুষের প্রধান কর্তব্য ? সবার মধ্যে একসাথে নারী-লোলুপতা জেগে উঠলো !!!! এইসব ঘটনা সভ্যতার লজ্জা, মানবসমাজের লজ্জা, শিক্ষার লজ্জা, রাজনীতি-ধর্মনীতি-সমাজনীতি-প্রশাসনের লজ্জা !!
যাইহোক, মন খারাপ কথা, অজ্ঞানী-আহাম্মক মানবের মানসিক অবস্থার কথা এখন থাক্। কারণ, গুরুমহারাজ তো বলেই দিয়েছেন – ” পৃথিবী গ্রহটাই এখনো কয়েক লক্ষ-কোটি বছরের শিশু ! এখানকার মানুষের মানসিকতা যেন সবে হামাগুড়ি অবস্থা থেকে টলমল পায়ে উঠে দাঁড়াতে শিখেছে !” সুতরাং পৃথিবীর মানুষ তো চেতনায় একেবারে শিশু অবস্থাতেই রয়েছে, এইজন্যেই তো মহাজনগণ মানবকে অজ্ঞান, আহাম্মক, অবোধ বলে গেছেন। আর গুরুমহারাজের কথায় “অবোধের গোবধে আনন্দ!” অর্থাৎ অবোধ অবস্থার, অজ্ঞান অন্ধকারে থাকা অবস্থার মানব__ ভয়ঙ্কর অন্যায় কার্য্যও হাসতে হাসতে করতে পারে। তাই আমরা এইসব কথা বাদ দিয়ে আবার গুরুমহারাজের কথায় ফিরে যাই।
গুরুমহারাজ বললেন – ” ভালোবাসা ক্রমে ক্রমে ক্ষুদ্র স্বার্থবেষ্টনী অতিক্রম করে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। সংসারের যাবতীয় প্রতিকূলতা একমাত্র ভালোবাসার কাছেই পরাজিত। ভালবাসার কোনো আড়ম্বর নাই। এতেই জগৎ-সংসার ‘আনন্দনিকেতন’ বোধ হোতে থাকে।”
গুরুমহারাজ নিজে ছিলেন মহাপ্রেমিক, পরমপ্রেমিক – অপার্থিব প্রেমধনের অধিকারী। গুরুমহারাজের সান্নিধ্যে যে সমস্ত মানুষজনেরা এসেছিলেন তারা সকলেই একথা একবাক্যে স্বীকার করবেন যে, ” বাবাঠাকুর বা গুরুজীর কাছ থেকে যে ভালোবাসা পেয়েছিলাম, তা বাবা-মায়ের কাছেও কোনোদিন পাই নি !” পুরুষভক্তেরা গুরুজীকে এমন কথা বলতো, যা তার স্ত্রীকেও বলে নি ! আবার বহু নারীভক্তেরা গুরুমহারাজকে এমন সব কথা বলতো, যেগুলি তারা কোনোদিন তার স্বামীকেও বলতে পারে নি ! গুরুমহারাজের কাছ থেকেই আমরা এসব কথা শুনেছিলাম। গুরু মহারাজের জীবনের ঘটনাহমূহ পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় তাঁর সমগ্র জীবনের সমস্ত ঘটনাবলিই ছিল মানব-শিক্ষার জন্য ! সুতরাং আমরা(পরমানন্দ ভক্তরা) সেই সময় একটা সিদ্ধান্তে এসেছিলাম যে, “আমার জীবনই আমার বাণী”– একথা একমাত্র ভগবানেরই বলা সাজে – বাকিদের বলা বাতুলতা মাত্র !