শ্রী শ্রী গুরুমহারাজ স্বামীপরমানন্দের কথা (কথিত ও লিখিত) এখানে বলা হচ্ছিলো। গুরুমহারাজ তাঁর রচিত প্রথম গ্রন্থ “সহজতা ও প্রেম”-এ ‘প্রেম’ বিষয়ক যে সব আলোচনা করেছিলেন, সেইগুলিই এখানে তুলে ধরা হোচ্ছিলো। গুরুমহারাজ বলেছেন – ” প্রেম ও ভালোবাসার ধর্ম কোনরূপ সাম্প্রদায়িক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে নাই। প্রেম সার্বজনীন – কাউকে বাদ দিয়ে নয়। প্রেমে ছোট-বড়, ধনী ও দরিদ্র ইত্যাদি কোনো ভেদ নাই। যারা সাম্প্রদায়িক ভাবনাযুক্ত, তারাই অপর সম্প্রদায়কে ছোট বা বিনাশ করে_ নিজ সম্প্রদায়কে বড় করতে চায়।” সুতরাং আমরা এটাই বুঝতে পারলাম যে, পৃথিবীতে বর্তমানে যত ভেদবুদ্ধি, যত সাম্প্রদায়িক বুদ্ধি, যত প্রকারের উচ্চ-নিচ (জাতিগত, বর্ণগত, অর্থনৈতিকগত ইত্যাদি) ভেদবুদ্ধি রয়েছে – এগুলি সবই বিনষ্ট হয় প্রেমে। এইজন্যেই গুরুমহারাজ মানবের অনৈতিক আচরণে বেদনার্ত হয়ে দীপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেছেন – ” প্রেম – প্রেম – প্রেম। একমাত্র প্রেম। এই প্রেমের দ্বারা সমস্ত সমস্যার সমাধান হবে।”
আর একটা ব্যাপারে সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষকে বারবার সতর্ক করেছেন গুরুমহারাজ, আর সেটা হোলো – সকলকে সাম্প্রদায়িক মনোবৃত্তি ত্যাগ করতেই হবে। বেশিরভাগ অশান্তির মূলে এই সাম্প্রদায়িকতার মনোভাব। ‘আমার মতটাই ঠিক, অপরেরটা ভুল!’–এইরূপ মনোভাবই সাম্প্রদায়িক মনোভাব। ব্যাপারটা এতোদূরে সীমাবদ্ধ থাকলেও হয়তো ঠিক ছিল – কিন্তু তা তো থাকে না ! এরপরেই ঐ মনোভাব থেকে জন্ম নেয় – ”আমার মতটা যেহেতু একমাত্র সত্য এবং তোমারটা ভুল, অতএব তোমাকে আমার মতটাকেই গ্রহণ করতে হবে – আমার মতটাই মানতে হবে। তা যদি না মানো – তাহলে তোমাকে জোর করে মানাবো, প্রয়োজনে তোমাকে মেরে ফেলবো।” কি সাংঘাতিক মানসিকতা ! এইটা যদি পৃথিবীগ্রহের শ্রেষ্ঠ জীব মানুষের মানসিকতা হয় – তাহলে কি পৃথিবীগ্রহের মানুষকে উন্নত বলা চলে ? তাদেরকে শিক্ষিত-সভ্য-সংস্কৃতবান বলা চলে ?
যাইহোক, এবার আমরা গুরুমহারাজের কথায় আবার ফিরে যাই – দেখি গুরুমহারাজ আরো নতুন নতুন কি কথা বলেছেন। গুরুমহারাজ বলেছেন – ” মানবের স্বভাব যখন সুন্দর হবে, তখনই তার ত্রিতাপ দুঃখ বা যাবতীয় জ্বালা-যন্ত্রণা দূরীভূত হবে।” আবার নতুন information
দিলেন গুরুমহারাজ ! বললেন মানব জীবনের যত জ্বালা-যন্ত্রণা, সে সবের অবসান হবে – মানুষের যদি স্বভাব সুন্দর হয় ! গুরুমহারাজ একবার আমাদেরকে বলেছিলেন – ” পরমানন্দ কি করে জানিস তো – সে তোদের মনোজগতের চিন্তাভাবনার মোড়টা শুধু একটু ঘুরিয়ে দেয়। যাতে তোরা তোদের স্ব-ভাবে ফিরে আসিস !” মনের ভালো চিন্তাগুলি যদি সুন্দর হয়, তাহলে মানবের স্বভাবও সুন্দর হয়। আর মানবের স্বভাব সুন্দর হোলে মানবের ত্রিতাপ জ্বালা অর্থাৎ আধিভৌতিক, আধিদৈবিক ও আধ্যাত্মিক জ্বালার অবসান ঘটে।
এরপরে গুরুমহারাজ এই বিষয়ে আরও নতুন নতুন কথা বললেন – ” মানবজীবন যেন একটি কেন্দ্র। কেন্দ্র স্থির হোলে যত খুশী বৃত্ত আঁকা যায়, কিন্তু কেন্দ্র ছাড়া বৃত্ত রচনা যেমন অসম্ভব, সেরূপ মানবজীবনেও কেন্দ্র স্থির হোলে জগৎ জুড়ে বিশাল প্রেমের রাজ্য রচনা করা যাবে, নতুবা বক্তৃতা-সভাসমিতি-হিতোপদেশ অথবা নীতিকথার দ্বারা তা কখনোই সম্ভব নয়।” কিন্তু আমরা তো বক্তৃতা-সভাসমিতি করতেই ভালোবাসি_সেইসব স্থানে যেতেই ভালবাসি, আমরা অপরকে হিতোপদেশ বা নীতিকথা শোনাতে ভালোবাসি, অবশ্য সেগুলি নিজের জীবনে আচরণে আনি না – শুধুই অপরকে শিক্ষা দিই। কিন্তু গুরুমহারাজের কথা অনুযায়ী — এইসবের দ্বারা মানুষ তার ব্যাষ্টিচেতনা থেকে সমষ্টিচেতনায় উন্নীত হোতে পারে না – জগৎজুড়ে বিশাল প্রেমের রাজ্য রচনা করা যায় না !
তাছাড়া এখানে গুরুমহারাজ আরো নতুন কথা যেটা বললেন সেটা হোলো – ‘মানবজীবন যেন একটি কেন্দ্র।’ তবে শর্তটা হোলো – প্রথমেই এই কেন্দ্রকে স্থির করতে হবে। কেন্দ্র স্থির না হোলে তো কোনো বৃত্তই রচনা করা যায় না। তাহলে তার পরিধি বাড়িয়ে আরো বড় বৃত্ত, আরো আরো বড় বৃত্ত বা সমগ্র জগৎব্যাপি বড় বৃত্ত রচনা করব কি করে ? স্ব-ভাবে ফিরে আসা অর্থাৎ বিবেকের জাগরণ ও আত্মিক উত্তরণ হোলেই মানুষের জীবনের কেন্দ্র স্থির হয়, মানবের মন তখন একাগ্র হয় এবং তার জীবন-জগৎ ও ঈশ্বর সম্বন্ধে ধারণা পাকা হয়ে যায়।
যাইহোক, আমরা পুনরায় গুরুমহারাজের পরবর্তী কথায় ফিরে আসি। গুরুমহারাজ বললেন – ” প্রিয় আত্মন্ – প্রেমের আনন্দে নাচতে থাকো। আনন্দে উৎপত্তি, আনন্দে অবস্থিতি এবং আনন্দেই পরিণতি। এই আনন্দময় পরমেশ্বরকে ভুলেই মানবের যতপ্রকার দুর্গতি ! প্রেমস্বরূপ পরমেশ্বর আনন্দময়।” প্রিয় পাঠকবৃন্দ ! পরমপুরুষ পরম প্রেমময় গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দ মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যের কথা মনে পড়িয়ে দিলেন ! প্রেমানন্দে বা প্রেমের আনন্দে দুবাহু উপরে তুলে নৃত্যের দৃশ্য পৃথিবীর মানুষ প্রথম দেখেছিল আজ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচশো বছর আগে নবদ্বীপের মাটিতে। মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য তাঁর সহযোগী মহাপ্রভু নিত্যানন্দের সাথে এই প্রেমের নৃত্যের শুভসূচনা করে গেছিলেন। “আপনি নেচে জগৎ নাচায়!”– মহাপ্রভু সম্বন্ধে মহাজনগণের এই প্রকার মূল্যায়ন ছিল। কিন্তু গুরুমহারাজ আমাদের জানালেন, “এই নৃত্য ছিল প্রেমের নৃত্য, প্রেমানন্দের নৃত্য!” কথিত আছে – যখন ভাবাবেগে মহাপ্রভু উন্মাদবৎ নৃত্য করতে করতে প্রচণ্ড বেগে ছুটে বেরিয়ে যেতেন – ওনার পার্ষদ-সঙ্গী-সাথীগণ ওনার সাথে গতিতে পরাস্ত হোতেন – ছুটে গিয়েও ওনার সঙ্গ পেতেন না। কিন্তু মহাপ্রভু কোন পথে গেছেন – তা ওনারা পথে বেরিয়েই বুঝতে পারতেন, কারণ, মহাপ্রভুর প্রেমের নৃত্যের প্রভাবে পশুপাখি, সাধারণ মানুষ ভাবাবেশে নৃত্য করতো ! এমনকি লতা-বৃক্ষাদিও যেন উৎকর্ণ হয়ে যেতো ! গুরুমহারাজ এই প্রেমের কথাই বললেন – যে প্রেমের আনন্দে ‘ভাব’ সৃষ্টি হয় এবং স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে নৃত্য করা যায়। সেইজন্যেই তো গুরু মহারাজ বললেন__”তোমরা প্রেমের আনন্দে নৃত্য করতে থাকো !!”
আর একটা ব্যাপারে সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষকে বারবার সতর্ক করেছেন গুরুমহারাজ, আর সেটা হোলো – সকলকে সাম্প্রদায়িক মনোবৃত্তি ত্যাগ করতেই হবে। বেশিরভাগ অশান্তির মূলে এই সাম্প্রদায়িকতার মনোভাব। ‘আমার মতটাই ঠিক, অপরেরটা ভুল!’–এইরূপ মনোভাবই সাম্প্রদায়িক মনোভাব। ব্যাপারটা এতোদূরে সীমাবদ্ধ থাকলেও হয়তো ঠিক ছিল – কিন্তু তা তো থাকে না ! এরপরেই ঐ মনোভাব থেকে জন্ম নেয় – ”আমার মতটা যেহেতু একমাত্র সত্য এবং তোমারটা ভুল, অতএব তোমাকে আমার মতটাকেই গ্রহণ করতে হবে – আমার মতটাই মানতে হবে। তা যদি না মানো – তাহলে তোমাকে জোর করে মানাবো, প্রয়োজনে তোমাকে মেরে ফেলবো।” কি সাংঘাতিক মানসিকতা ! এইটা যদি পৃথিবীগ্রহের শ্রেষ্ঠ জীব মানুষের মানসিকতা হয় – তাহলে কি পৃথিবীগ্রহের মানুষকে উন্নত বলা চলে ? তাদেরকে শিক্ষিত-সভ্য-সংস্কৃতবান বলা চলে ?
যাইহোক, এবার আমরা গুরুমহারাজের কথায় আবার ফিরে যাই – দেখি গুরুমহারাজ আরো নতুন নতুন কি কথা বলেছেন। গুরুমহারাজ বলেছেন – ” মানবের স্বভাব যখন সুন্দর হবে, তখনই তার ত্রিতাপ দুঃখ বা যাবতীয় জ্বালা-যন্ত্রণা দূরীভূত হবে।” আবার নতুন information
দিলেন গুরুমহারাজ ! বললেন মানব জীবনের যত জ্বালা-যন্ত্রণা, সে সবের অবসান হবে – মানুষের যদি স্বভাব সুন্দর হয় ! গুরুমহারাজ একবার আমাদেরকে বলেছিলেন – ” পরমানন্দ কি করে জানিস তো – সে তোদের মনোজগতের চিন্তাভাবনার মোড়টা শুধু একটু ঘুরিয়ে দেয়। যাতে তোরা তোদের স্ব-ভাবে ফিরে আসিস !” মনের ভালো চিন্তাগুলি যদি সুন্দর হয়, তাহলে মানবের স্বভাবও সুন্দর হয়। আর মানবের স্বভাব সুন্দর হোলে মানবের ত্রিতাপ জ্বালা অর্থাৎ আধিভৌতিক, আধিদৈবিক ও আধ্যাত্মিক জ্বালার অবসান ঘটে।
এরপরে গুরুমহারাজ এই বিষয়ে আরও নতুন নতুন কথা বললেন – ” মানবজীবন যেন একটি কেন্দ্র। কেন্দ্র স্থির হোলে যত খুশী বৃত্ত আঁকা যায়, কিন্তু কেন্দ্র ছাড়া বৃত্ত রচনা যেমন অসম্ভব, সেরূপ মানবজীবনেও কেন্দ্র স্থির হোলে জগৎ জুড়ে বিশাল প্রেমের রাজ্য রচনা করা যাবে, নতুবা বক্তৃতা-সভাসমিতি-হিতোপদেশ অথবা নীতিকথার দ্বারা তা কখনোই সম্ভব নয়।” কিন্তু আমরা তো বক্তৃতা-সভাসমিতি করতেই ভালোবাসি_সেইসব স্থানে যেতেই ভালবাসি, আমরা অপরকে হিতোপদেশ বা নীতিকথা শোনাতে ভালোবাসি, অবশ্য সেগুলি নিজের জীবনে আচরণে আনি না – শুধুই অপরকে শিক্ষা দিই। কিন্তু গুরুমহারাজের কথা অনুযায়ী — এইসবের দ্বারা মানুষ তার ব্যাষ্টিচেতনা থেকে সমষ্টিচেতনায় উন্নীত হোতে পারে না – জগৎজুড়ে বিশাল প্রেমের রাজ্য রচনা করা যায় না !
তাছাড়া এখানে গুরুমহারাজ আরো নতুন কথা যেটা বললেন সেটা হোলো – ‘মানবজীবন যেন একটি কেন্দ্র।’ তবে শর্তটা হোলো – প্রথমেই এই কেন্দ্রকে স্থির করতে হবে। কেন্দ্র স্থির না হোলে তো কোনো বৃত্তই রচনা করা যায় না। তাহলে তার পরিধি বাড়িয়ে আরো বড় বৃত্ত, আরো আরো বড় বৃত্ত বা সমগ্র জগৎব্যাপি বড় বৃত্ত রচনা করব কি করে ? স্ব-ভাবে ফিরে আসা অর্থাৎ বিবেকের জাগরণ ও আত্মিক উত্তরণ হোলেই মানুষের জীবনের কেন্দ্র স্থির হয়, মানবের মন তখন একাগ্র হয় এবং তার জীবন-জগৎ ও ঈশ্বর সম্বন্ধে ধারণা পাকা হয়ে যায়।
যাইহোক, আমরা পুনরায় গুরুমহারাজের পরবর্তী কথায় ফিরে আসি। গুরুমহারাজ বললেন – ” প্রিয় আত্মন্ – প্রেমের আনন্দে নাচতে থাকো। আনন্দে উৎপত্তি, আনন্দে অবস্থিতি এবং আনন্দেই পরিণতি। এই আনন্দময় পরমেশ্বরকে ভুলেই মানবের যতপ্রকার দুর্গতি ! প্রেমস্বরূপ পরমেশ্বর আনন্দময়।” প্রিয় পাঠকবৃন্দ ! পরমপুরুষ পরম প্রেমময় গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দ মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যের কথা মনে পড়িয়ে দিলেন ! প্রেমানন্দে বা প্রেমের আনন্দে দুবাহু উপরে তুলে নৃত্যের দৃশ্য পৃথিবীর মানুষ প্রথম দেখেছিল আজ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচশো বছর আগে নবদ্বীপের মাটিতে। মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য তাঁর সহযোগী মহাপ্রভু নিত্যানন্দের সাথে এই প্রেমের নৃত্যের শুভসূচনা করে গেছিলেন। “আপনি নেচে জগৎ নাচায়!”– মহাপ্রভু সম্বন্ধে মহাজনগণের এই প্রকার মূল্যায়ন ছিল। কিন্তু গুরুমহারাজ আমাদের জানালেন, “এই নৃত্য ছিল প্রেমের নৃত্য, প্রেমানন্দের নৃত্য!” কথিত আছে – যখন ভাবাবেগে মহাপ্রভু উন্মাদবৎ নৃত্য করতে করতে প্রচণ্ড বেগে ছুটে বেরিয়ে যেতেন – ওনার পার্ষদ-সঙ্গী-সাথীগণ ওনার সাথে গতিতে পরাস্ত হোতেন – ছুটে গিয়েও ওনার সঙ্গ পেতেন না। কিন্তু মহাপ্রভু কোন পথে গেছেন – তা ওনারা পথে বেরিয়েই বুঝতে পারতেন, কারণ, মহাপ্রভুর প্রেমের নৃত্যের প্রভাবে পশুপাখি, সাধারণ মানুষ ভাবাবেশে নৃত্য করতো ! এমনকি লতা-বৃক্ষাদিও যেন উৎকর্ণ হয়ে যেতো ! গুরুমহারাজ এই প্রেমের কথাই বললেন – যে প্রেমের আনন্দে ‘ভাব’ সৃষ্টি হয় এবং স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে নৃত্য করা যায়। সেইজন্যেই তো গুরু মহারাজ বললেন__”তোমরা প্রেমের আনন্দে নৃত্য করতে থাকো !!”