স্থান ~ পরমানন্দ মিশন ৷ উপস্থিত ভক্তগণ ~ সিঙ্গুরের ভক্তরা, আশ্রমস্থ মহারাজগণ ও অন্যান্যরা। সময়~~1992।

জিজ্ঞাসু :— ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি ভিন্ন ভিন্ন রঙ পছন্দ করে, এটা দিয়ে কি তাদের মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়?

গুরুমহারাজ :– সব জায়গায় এবং সব ব্যাপারে মাষ্টারি করার চেষ্টা করিস না, তাহলে কিন্তু ঠকতে হবে ! যখন জ্ঞান হবে তখন সব জানতে পারবি। যেন মনে হচ্ছেকোন কাজ নাই যখন, তখন যাই একবার গুরুদেব কে খানিক ভাই ! তাই তো? তোর ভঙ্গিচটা ভালো ছিল না বলেই এতকটা কথা বললাম ! গুরুর কাছে শ্রদ্ধাবনত চিত্তে জিজ্ঞাসার দ্বারা অজ্ঞানতা নাশ করা যায়, এটাই ভারতীয় পরম্পরাএরপর থেকে এই কথাগুলো মনে রাখবি।

  যাইহোক, কথা হচ্ছে যেহেতু এটি ত্রিগুণ প্রপঞ্চ, তাই এখানে ভিন্ন ভিন্ন গুণ ও ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির মানুষ বাস করে থাকে এবং  তারা ভিন্ন ভিন্ন মানসিকতাসম্পন্ন — এমনটা হ‌ওয়াই তো স্বাভাবিক ! আবার বিভিন্ন জড়পদার্থ, উদ্ভিদ, ফল, ফুল — এদেরও ভিন্ন ভিন্ন বর্ণ, গন্ধ ও গুণ বিদ্যমান_অর্থাৎ এককথায় এই পৃথিবীর সমস্ত কিছুই ত্রিগুণসম্পন্ন। সুতরাং যে ব্যক্তি যে গুণসম্পন্ন__সেই ব্যক্তি সেই গুণসম্পন্ন বস্তু বা তন্মাত্রাকে প্রিয় করতে চাইবে__ এটাও স্বাভাবিক ব্যাপার।

  ফলে তুমি যদি শুধু রঙ দিয়ে ব্যক্তির বিচার করতে চাও __সেক্ষেত্রে সেই ব্যক্তির উপর বিশেষ কোন রঙের প্রভাব অনুকূল ফল দেবে এবং অন্য রঙের প্রভাব প্রতিকূল হবে__ এটাই ঘটে থাকে। রঙবিজ্ঞান বা বর্ণবিজ্ঞান যিনি জানেন, তিনি বিভিন্ন রঙ-এর উপর মানুষের প্রভাব বা মানুষের উপর ভিন্ন রঙের কি প্রভাবতা বুঝতে পারেন এবং কোন অসুবিধা হলে তার বিধানও দিতে পারেন।

 সাধারণত দেখা যায় সাদা পবিত্রতা ও শান্ততার প্রতীক। ফলে পবিত্র ও শান্ত ব্যক্তিরা সাদারঙ পছন্দ করেন। গেরুয়া বা হলুদ বৈরাগ্যের প্রতীক। তাই বৈরাগ্যবান ব্যক্তিরা এই রঙ পছন্দ করেন। সুতরাং এখানে অনুষ্ঠানসর্বস্বতা বা জোর করে চাপিয়ে দেবার কোন ব্যাপারই নেই। সবুজরঙ তারুণ্য ও প্রাণচাঞ্চল্যের প্রতীক। ফলে উচ্ছল তরুণ-তরুণীরা এই রঙ পছন্দ করতে পারে। কিন্তু School বা College-এ Uniform হিসাবে সবুজরঙ ব্যবহার না করলেই ভালো হয়। কারণ তাহলে ছেলে-মেয়েদের মধ্যে আরও উচ্ছৃঙ্খলতা বা উচ্ছলতা বেড়ে যাবে। সেইজন্য স্কুল-কলেজের Uniform সবচাইতে ভালো উপরটা সাদা এবং নিচেরটা খাঁকি বা হালকা গেরুয়ারঙের_এতে পড়ুয়াদের মনে একটা পবিত্রতা এবং ত্যাগের ভাব আসবে।

     যাইহোক, এইভাবে রঙবিজ্ঞান অনুযায়ী দেখা যায়_গাঢ়নীল অসীমের, কালোরঙ শোকের, লালরঙ বিপদ ও উগ্রতার প্রতীক বা পরিচায়ক। হিন্দু নারীদের বিবাহের পর সিঁথিতে সিঁদুর দেওয়া হয়, এটা লাল বা কমলা যাইহোক, এতে বোঝানো হয় "সাবধান ইনি পরস্ত্রী" — এটা এয়োস্ত্রীর প্রতীক। তবে লালরঙ যে সমস্ত নারী বা পুরুষরা পছন্দ করে জানতে হয় তারা স্বভাবে উগ্র ! কাপালিকরা লালরঙ ব্যবহার করে — ওরাও খুব উগ্র হয়। আবার লালরঙ কামনারও প্রতীক — আগেকার ভারতীয় সমাজে সাধারণ গৃহস্থ বাড়িতে(এখনও গ্রামে-গন্জে এই রীতি রয়েছে।)নববিবাহিতাকে বেশির ভাগ লালরঙের কাপড় কিনে দেওয়া হোত__এর কারণ নববধূ লালরঙের কাপড় পড়ে ঘুরে বেড়ালে বাড়ির পুরুষদের কাছে সেটি দৃষ্টিনন্দন হয় এবং বাড়ির পুরুষেরা তাড়াতাড়ি ঐ বধূটিকে আপন করে নিতে পারে ! এটি পুরোপুরি মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার।

বিভিন্ন দেব-দেবীর পুজাতেও ভিন্ন ভিন্ন রঙের ফুল বা উপাচার ব্যবহার করা হয়। এটাও সাধক তাঁর নিজ নিজ গুণ বা প্রকৃতি অনুসারেই নির্ধারণ করে থাকেন — পরে সেটাই পরম্পরা হয়ে দাঁড়ায়। ভিন্ন ভিন্ন মানুষ, ভিন্ন তাদের মানসিকতা তাই উপাচারের‌ও এই ভিন্নতা। নাহলে বিচার করে দ্যাখোঈশ্বর তো সেই এক ! মানুষের মধ্যে কেউ তাঁকে দেব ভাবছে, কেউ বা দেবী — কেউ কালোরঙের ভাবছে, কেউ বা ভাবছে ফর্সা, কেউ ভাবছে ঈশ্বর সংস্কৃত মন্ত্র বললে খুশি হবে, কেউ ভাবছে ইংরাজী বা আরবি অথবা পালি ব্যবহার করা উচিত ! এই যে ভিন্নতা দেখছোএগুলো কিন্তু মানুষের সৃষ্টি , ঈশ্বরের দুনিয়ায় এই ধরনের কোন ভিন্নতা নেই। সেই অর্থেসমগ্র পৃথিবীর ধর্মগ্রন্থের বিচারে গীতার শিক্ষা সার্বজনীন। এইজন্যেই গীতা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মগ্রন্থ কারণ ওখানে বলা আছে, “যে যথা মাং প্রপদ্যন্তে তাং স্তথৈব ভজাম্যহম্(অর্থাৎ যে যেভাবে আমাকে ভজনা করে আমি সেভাবেই তাকে কৃপা করি!)” অন্য কোন ধর্মগ্রন্থে মহাবিশ্বপ্রকৃতির এই উদার ভাবটি পরিস্ফুট হয় নি!

ভিন্ন ভিন্ন মানুষের ভিন্ন ভিন্ন মানসিকতা, ভিন্ন ভিন্ন পূজা-পদ্ধতি বা ভিন্ন ভিন্ন উপাচার ! নাহলে সেই এক এবং অদ্বিতীয় ঈশ্বরের আরাধনায় বা পূজায় ভিন্নতার তো কোন প্রয়োজন ছিল না ! নিজ নিজ গুণ ও প্রকৃতি অনুযায়ী মানুষ এক-একজন মহান ব্যক্তির মত অথবা কোন একটা Group-এর প্রচলিত পদ্ধতিকে মেনে নিয়ে এক-একটা দল গঠন করে ফেলেছে এবং সেই মতের নির্দিষ্ট আচার-অনুষ্ঠান মেনে চলে।

এই ভারতবর্ষে বৈদিক পঞ্চাশাখা, অর্থাৎ সৌর, শাক্ত, বৈষ্ণব, শৈব ও গাণপত্য এইভাবেই বিভক্ত হয়েছিল। পরবর্তীকালে স্থান-কাল-পাত্র ভেদে ধর্মীয় মতবাদগুলি আরও কত বিভক্ত হয়েছে ! আর বিভক্ত হতে হতে আজ পৃথিবীকে যেমন দেখছো _সেইরূপ একটি জায়গায় এসে পৌঁছেছে ! এসব দেখে শুনে আমার আবার ভয় হয় পরবর্তীকালের মানুষ আমাকে নিয়ে আবার নতুন একটা দল বা সম্প্রদায় গঠন করবে না তো!

 তবে একটা কথা তোমরা জেনে রাখবে, আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গিতে কোথাও কোনো বিরোধ নেই। কেউ কোথাও বিরোধ করছে __মানেই জানবে সেই ব্যক্তি বা সেই সম্প্রদায়_Spiritually Junior ! ঈশ্বর সবার, তিনি (that) সবার একান্ত আপনার ! তাই ভিন্ন ভিন্ন ভাবে, ভিন্ন ভিন্ন ভাষায়, ভিন্ন মন্ত্রে, ভিন্ন উপাচারে যে যেভাবে (তার গুণ বা প্রকৃতি অনুযায়ী) ঈশ্বরকে তুষ্ট করার চেষ্টা করবে — ঈশ্বর তাতেই প্রীত হবেন। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ছিলেন প্রকৃত অধ্যাত্মবিজ্ঞানী। তিনি বলেছিলেন : "ছোট্ট শিশু পরিষ্কার করে 'বাবা' বলতে পারে না, 'বা' বলে বা 'পা' বলে, তা শুনেই পিতার কত আনন্দ হয়।" তেমনি ঈশ্বরকে যদি আপন ভাবতে পারা যায়, তাহলে আর ভয় কি? কোন বিশেষ উপাচার বা বিশেষ পূজা-পদ্ধতির কি প্রয়োজন? যো সো করে তাঁকে প্রীত করাই তো উদ্দেশ্য — তাহলে সেইটা করলেই হয়। তোমাদের মানসিকতা, তোমাদের বিচার, তোমাদের কর্ম, ঈশ্বর-প্রীত্যর্থে হোক। আর এটা করতে পারলেই ঈশ্বরের করুণা তোমার জীবনে অনুভূত হবে, ঈশ্বরের অস্তিত্বে তোমার আরও দৃঢ়বদ্ধ আস্থা আসবে  — এটাই চরৈবেতি।

রঙবিজ্ঞান থেকে ঈশ্বরবিজ্ঞানে চলে এলাম, দেখো কারও যেন ভাবনষ্ট না হয়!

জিজ্ঞাসু :– এই যে আপনি সিঙ্গুর আশ্রমের Tour-Programme-এ পুরী যাচ্ছেন _এটা কি তত্ত্বমসি যোগাশ্রমের উন্নতির জন্য, না বহু ভক্তের গুরুর সাথে তীর্থদর্শনের মানসিকতা বা গুরুভক্তির আকাঙ্ক্ষা মেটানোর জন্য?

গুরুমহারাজ :— গুরুভক্তির কথা আর বোলো না, কি সব গুরুভক্তি! আমি কারও দোষ দেখি না_ তাই, না হলে সবারই তো অপরাধ হয়ে যেত ! অনেকেই আমাকে বলে আবার দেখেছি চিঠিতেও লেখে, “বাবা অপরাধ নিও না।” অথবা “অপরাধ ক্ষমা করবেন” — কিন্তু আমি তো কারও দোষই ধরি না, ফলে অপরাধ নেওয়া বা ক্ষমা করার কোন প্রশ্নই ওঠে না। তবে আমার প্রতি কেউ যদি কোন অন্যায় করে তাহলে মহাপ্রকৃতিতে তার একটা ছাপ পড়ে। আর ওখান থেকে একটা পাওনা সে পেতে পারে কিন্তু আমি কখনই কারও অপরাধ নিই না। এইজন্যই আমার ‘+’ ও নেই ‘—’ ও নেই, আমি সবসময় নিউট্রাল, এটাই নিত্য বর্তমানের স্থিতি।

 তবে গুরুভক্তির যে কথা তুললে, তাতেই বলছি — Tour Programme-এ গেলে গুরুভক্তির প্রকৃত বহরটা বোঝা যায়। এর আগেও তো আমি ভক্তদের নিয়ে দক্ষিণভারত Tour-এ গিয়েছিলাম। দেখলাম তো__ ভক্তরা আমাকে দেখবে কি, আমাকেই ভক্তদেরকে দেখতে হচ্ছে ! বললাম না_ প্রবাসেই ভক্তির দৌড় ভালো বোঝা যায় ! ভক্তরা নিজেদেরকে নিয়ে আর তাদের বৌ-বাচ্ছাদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে এত বেশি ব্যস্ত থাকে যে, গুরুকে দেখার আর সময়ই পায় না। দক্ষিণভারত Tour-এর কোন এক জায়গা থেকে কয়েকদিনের জন্য বাস ভাড়া করে Journey করতে হয়েছিল_বেশকিছু দর্শনীয় স্থান ঘোরার জন্য।  মজাটা কি হয়েছিল জানো__কয়েকজন বৃদ্ধকে নিয়ে আমাকে পিছনের Seat-এ বসতে হয়েছিল ! উদ্যোক্তাদের কেউ কেউ "গুরুজী পিছনের Seat-এ বসে আছেন — তোমরা কেউ Seat ছাড়ো ! ওনাকে সামনের দিকে বসতে দাও" — এরূপ বলায় কি উত্তর এসেছিল জানো? উত্তর এল — উনি যোগী, হিমালয়ে — পাহাড়ে, পর্বতে কত কাটিয়েছেন, কত কষ্ট সহ্য করেছেন ওনার এটা আবার কি কষ্ট? আমরা ছাপোষা সংসারী মানুষ, পিছনের সিটে বসলে বাসের ঝাঁকারে(jerking) কোমর ব্যথা হয়ে যাবে, আমরা কি অত কষ্ট করতে পারি? গুরুভক্তির বহর দেখলে?

   আর একজন_সে এই আশ্রমের দীক্ষিত, তবু সে সামান্য অসুবিধার জন্য বাস থেকে নেমে ফিরেআসবে বলে আমার সাথে প্রায় ঝগড়াই বাধিয়ে বসলো ! এখন তো তোমাদের অনেকেই পুরী যাবে আমার সাথে — দেখবে ভক্ত-শিষ্যদের গুরুভক্তি কতটা থাকে ! আর তোমরা যারা শুনছ তারাই বা কতটা ভক্তি দেখাতে পারো সেটারও একটা পরীক্ষা হয়ে যাবে!

তবে দ্যাখো, সাধারণত এখানে যারা আসে আশ্রমের ভক্ত বা শিষ্য, তারা তো সবাই সংসারী মানুষ বা গৃহী মানুষ। অবশ্য জগৎ-সংসার এই ভাবটি ধরলে গৃহী-সন্ন্যাসী সবাই সংসারী! সেটা কথা নয় বা আমি সেই অর্থে বলছি না, সাধারণ অর্থে আলোচনা করছি। এই ‘পরমানন্দ মিশন’ বা আশ্রম, এটা একটা সন্ন্যাস আশ্রম। আশ্রম প্রতিষ্ঠার অন্যতম একটা উদ্দেশ্য হলো__ সাধারণ সংসারী মানুষ এখানে আসবে এবং তারা এখানে এসে সত্য, ত্যাগ, প্রেম ও শান্তির শিক্ষা গ্রহণ করবে। আর কি শিখবে? না Art of Life, Art of Living। কাদের কাছে শিখবে? — ত্যাগী, নিঃস্বার্থপর সন্ন্যাসীদের কাছ থেকে। এবার এখান থেকে এইসব শিক্ষা গ্রহণ করে তারা যখন গৃহে ফিরে যাবে এবং সেখানে শিখে যাওয়া আদর্শ পালন করবে তখন গৃহগুলি হয়ে উঠবে প্রকৃত‌অর্থে এক একটি গার্হস্থ আশ্রম। তবেই তো সেখানে তখন ভক্তিমান গৃহকর্তা বা ভক্তিমতী গৃহিণীর দেখা মিলবে এবং সন্তান-সন্ততিরা আধ্যাত্মিক পরিবেশে বেড়ে ওঠা যথার্থ নাগরিক বা মানুষ হয়ে উঠবে ! তবে এসব হতে তো কিছু সময় লাগবে। এখনই যদি আশা করো যে, প্রতিটি গৃহস্থ ভক্তির পরাকাষ্ঠা দেখাবে — তাহলে ভাবনায় একটু ভুল থেকে যাচ্ছে না কি!

 "আত্মনো মোক্ষার্থং জগদ্ধিতায় চ" — এর জন্য এখানে ক'জন আসে বল? যদি এমন কাউকে আমি পাই তাহলে সাথে সাথে আমি তাদের "গ্রহণ করি" বা 'খাই' অর্থাৎ সম্পূর্ণভাবে সে তখন আমার হয়ে যায় !

  "কালা কালা পায়েগা তো খায়েগা"। এই প্রসঙ্গে আমার বাল্যকালের একটা ঘটনা বলছি — বাঘনাপাড়া স্টেশনের কাছেই একটা বিরাট জামগাছ ছিল, যেখানে মাঝে মাঝেই জাম খেতে যেতাম। সেখানে কাঁড়ু বেলদার নামে এক হিন্দুস্থানীর সঙ্গে আমার বেশ ভাব ছিল।  লোকটির মদ এবং গাঁজা দুটোরই খাওয়ার অভ্যাস ছিল। একদিন জামতলায় গিয়ে দেখি ওই ব্যক্তি দারুণ নেশা করে জামগাছে উঠে দু'হাত দিয়ে থোকা থোকা জামের থোলোগুলি ধরে ছিঁড়ে একেবারে সবগুলো  মুখে পুরে দিচ্ছে। এদিকে হয়েছে কি _জামের সঙ্গেই ছোট ছোট অনেক চামচিকে, যেগুলি জামের রস খাবার জন্য অনেক সময় জামের জোকার মধ্যে থেকে যায়_ সেই রকম একটি কাঁড়ু বেলদারের মুঠির চাপে চিঁ-মি করে চিৎকার করতে শুরু করেছে ! কাঁড়ু বেলদার ঐরকম শব্দ শুনে প্রথমটায় একটু ঘাবড়ে গেছিল কিন্তু নেশার ঘোরে_ঐ শব্দকে কোন রকম পাত্তা না দিয়েই বলে উঠেছিল_ 'চিঁ করেগা ইয়া মি করেগা _ছোড়েগা নেহি, কালা কালা পায়েগা তো খায়েগা' ! এরপর সে চামচিকে সহ একমুঠো জাম একসঙ্গে মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে নিয়েছিল ! ওই দৃশ্য আমি গাছের নিচে দাঁড়িয়ে নিজের চোখে দেখেছিলাম।ঐ ঘটনায় প্রথমে কিছুটা কৌতুকবোধ হলেও পরে ঐ কথাগুলি আমার চিন্তাজগতে একটা বিরাট আলোড়ন তুলল — তাই তো কাঁড়ু বেলদারের মতো যদি জীবনের ভালো-মন্দ সবকিছুকে আত্মচিন্তা বা ইষ্টচিন্তায় লয় করা যায়, তাহলে কোনকিছুই মনকে বিচলিত করতে পারবে না — জীবনটাই ধ্যানময় হয়ে যাবে।

  সেই থেকে আমি এখনও সেইরূপই করে চলেছি — ভালোমন্দ বিচার না করে সকলকে আত্মস্বরূপ বলে গ্রহণ করছি। আর তা না করলেই বা চলবে কেন, কালোকে আলো করার জন্যই তো আমার আসা! এখানে অর্থাৎ এই আশ্রমে কালোরাই তো বেশি আসবে, এইজন্যই তো সমাজের মাঝখানে আশ্রম, নাহলে তো হিমালয়ের কোলে আশ্রম করতে পারতাম!