স্থান ~ শ্রীরামপুর (অসীম ব্যানার্জীর বাড়ি) ৷ সময় ~ ১৯৯২-৯৩ খ্রিস্টাব্দ । উপস্থিত ব্যক্তিগণ ~ সব্যসাচী মান্না, প্রশান্ত চ্যাটার্জী, শিবপুরের (হাওড়া) ও স্থানীয় ভক্তগণ ।
জিজ্ঞাসু :– ব্রাহ্মণরা সবাই কি শাক্ত ?
গুরুমহারাজ :– তা কেন হবে ? ব্রাহ্মণরা সবাই শাক্ত– এই ধারণা আপনার কিভাবে হোল ? সবকিছুই প্রকৃতি-অধীন, এই হিসাবে যদি শক্তিকে বিচার করেন তাহলে– আপনার বিচারধারা ঠিক আছে, কারণ_সেই হিসাবে আমরা সবাই শাক্ত। আর যদি বৈদিক পঞ্চশাখার কথা ধরেন তো সেখানে সৌর, শৈব, শাক্ত, গাণপত্য ও বৈষ্ণব –এই পাঁচ প্রকার শাখার কথা বলা হয়েছে ! ব্রাহ্মণেরা এই পাঁচ মতের যে কোনো একটির উপাসক হতে পারেন৷ ‘ব্রাহ্মণ’ বলতে আপনি নিশ্চয়ই উপনয়ন সংস্কার করার পর উপবীতধারী ব্রাহ্মণদের কথাই এখানে আলোচনা করছেন– আর আমিও সেই উপবীতধারী ব্রাহ্মণদের সম্বন্ধেই বলছি। প্রকৃতপক্ষে ‘ব্রাহ্মণ’ কথাটির অন্য অর্থ ! যিনি ব্রহ্মবিৎ অর্থাৎ যিনি ব্রহ্মকে জানেন – তিনিই ব্রাহ্মণ। আর আপনি যে অর্থে ব্রাহ্মণদের উল্লেখ করলেন –এদের পূর্বপুরুষেরা কালের নিয়মে যে কোন সময়ে রাজন্যবর্গের সহায়তায় সমাজের শীর্ষে চলে এসেছিল। হয়তাে সেই ব্যক্তিরা প্রকৃত অর্থে উপযুক্তও ছিল–কিন্ত কালক্রমে তাদের বংশধরদের মধ্যে আর সেই ধ্যান-জপ নেই, সেই শিক্ষা-দীক্ষা নেই, তবু সমাজে বংশানুক্রমিকভাবে “বামুনের ছেলে বামুন”–এই হিসাবে এরা রয়ে গেছে। আর বর্তমানে শুধু বামুনের বামনাই-টাই রয়েছে, ব্রাহ্মণত্ব বলে প্রায় কিছুই আর অবশিষ্ট নেই।
সে যাইহােক, বর্তমানের সামাজিকভাবে ‘ব্রাহ্মণ’ পদবাচ্যরা ব্রহ্মকে জানেন না ঠিকই কিন্তু আমি বোলবো তারা অন্তত “ব্ৰহ্ম কি”- তা তারা জানার চেষ্টায় থাকুন ! তাতে অন্তত তাদের ব্রাহ্মণ নামের সার্থকতাটুকু থাকবে! আর এখন যে উপনয়ন সংস্কার করে ব্রাহ্মণ বানানো হচ্ছে, এই উপনয়নের তাৎপর্যটা কি–এটা কি আপনার জানা আছে ? আপনিও তাে ব্রাহ্মণ—তাহলে আপনিই বলুন “উপনয়নে”র প্রকৃত অর্থ বা তাৎপর্য কি ? আচ্ছাআমিই বলছিশুনুন। ‘উপনয়ন’ কথাটির প্রকৃত অর্থ হচ্ছে তৃতীয় চক্ষুর উন্মীলন। বহু পূর্বে এই উপনয়ন সংস্কার করতেন কুলগুরু বা সদগুরু। কুল অর্থে বংশ নয়—কুল গুরু অর্থে যিনি “কৌল” অর্থাৎ “অকুলে যিনি কুল পেয়েছেন।” গুরুপ্রণাম মন্ত্রে বলা হয়েছে -–“চক্ষুরন্মীলিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ।” গুরুই ঐ তৃতীয় চক্ষুর উন্মীলন ঘটান। যাঁর নিজের তৃতীয় চক্ষুর উন্মীলন হয়েছে–তিনিই তাে পারেন শিষ্যের তৃতীয় চোখ খুলে দিতে ! বৈদিক পরম্পরায় এটাই ছিল দীক্ষা, বৈদিক গুরুরা শিষ্যের তৃতীয় চক্ষুর উন্মীলন ঘটিয়ে ‘উপনয়ন সংস্কার’ করে দিতেন। আর তখন থেকেই ঐ ব্যক্তি ব্রাহ্মণ পদবাচ্য হােত। এখনকার মতাে বংশ পরম্পরায় ‘ব্রাহ্মণ’ হােত না। সেই অর্থে বৈদিক ব্রাহ্মণেরাই ছিলেন—ঠিক ঠিক দ্বিজ বা ব্রাহ্মণ। তৃতীয় চক্ষুর উন্মীলন যেন দ্বিতীয় জন্ম _তাই “দ্বিজ”। বৈদিক যুগে “সৌর” মতাবলম্বীরা প্রথমে এই পরম্পরা সৃষ্টি করেছিল। পরবর্তীতে অন্যান্যরাও একই পথ গ্রহণ করে। কারণ ব্রাহ্মণেরা যে ত্রিসন্ধ্যা ‘গায়ত্রী’ জপ করে—ওটা প্রকৃতপক্ষে সাবিত্রীমন্ত্র–যা গায়ত্রী ছন্দে উচ্চারণ করতে হয়। অনেকেই এটাকে গায়ত্ৰীমন্ত্র বলে থাকে–কিন্তু তা ভুল কথা। মন্ত্রটা হোল সাবিত্রীমন্ত্র আর ছন্দ হােল গায়ত্রী ছন্দ। এই সাবিত্রী মন্ত্র হোল সবিত্রীমণ্ডল বা সূর্যমণ্ডলেরই ধ্যান। সূর্যকেই জগতের প্রসবিতা জ্ঞান করে এই মন্ত্রের সৃষ্টি। এইজন্য ত্রিসন্ধ্যা আহ্নিক করার কথা বলা হয়েছে –এটাই বৈদিক বিধান। ভােরে প্রভাতসূর্য, মধ্যাহ্নে মধ্যাহ্নসূর্য এবং সন্ধ্যায় অস্তগামী সূর্যকে সামনে রেখে “গায়ত্রী” ছন্দে সাবিত্ৰীমন্ত্র উচ্চারণ করে ধ্যান করতে হয়।
এবার এটাকেই শাক্তরা কিভাবে নিলেন দেখুন– শাক্তরা তাদের উপাসনায় ঐ সাবিত্ৰীমন্ত্রকে রাখলেন–শুধু ধ্যানের বিষয়বস্তু বদলে গেল। উদীয়মান সূর্যের বদলে প্রভাতে ধ্যানের বিষয় হল কুমারী রূপিণী মা, মধ্যাহ্ন সুর্যের জায়গায় যুবতী রূপিণী মা, আর সন্ধ্যায় অস্তগামী সূর্যের জায়গায় প্রৌঢ়া রূপিণী মাকে ধ্যান করার বিধান এল। আপনি যে ‘ব্রাহ্মণরা সবাই কি শাক্ত’–এই জিজ্ঞাসা করলেন– তার মানে আপনার পরিবার হয়তাে শক্তিমন্ত্রে দীক্ষিত! এইজন্যই আপনাদের পারিবারিক গুরুদেব, ত্রিসন্ধ্যা আহ্নিক করার সময় ধ্যানের বিষয় হিসাবে তিন সন্ধ্যায় ঐ তিন মূর্তি অর্থাৎ কুমারী, যুবতী ও প্রৌঢ়ার ধ্যান করতে বলেছেন। আর এই জন্যেই হয়তাে আপনার ধারণা ব্রাহ্মণরা সবাই শাক্ত !
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা নয়--আমি রাজস্থানে দেখেছি গাণপত্য ব্রাহ্মণ। ঐ ব্রাহ্মণেরা একইরকম ভাবে সাবিত্ৰীমন্ত্রই উচ্চারণ করে কিন্তু ধ্যানের সময় গণপতির তিনটি বিশেষ রূপকে বসায়। এই তিনটি রূপ হােল লম্বােদর, গজানন (গণপতি) ও একদন্ত। এইভাবে শৈবরাও সাবিত্ৰীমন্ত্রকে একই রেখে ধ্যানের সময় ত্রিসন্ধ্যায় যথাক্রমে স্বয়ম্ভু লিঙ্গ, বান লিঙ্গ ও একলিঙ্গের ধ্যান করে। বৈদিক বৈষ্ণবেরাও (গৌড়ীয় বৈষ্ণব নয়) সাবিত্ৰীমন্ত্রকে ঠিক রেখেছেন কিন্তু সকাল-দুপুর ও সন্ধ্যায় যথাক্রমে ষড়ভূজ নারায়ণ, চতুর্ভুজ নারায়ণ এবং দ্বিভুজ নারায়ণের ধ্যান করেন।
আশা করি আপনি ব্যাপার টা বুঝতে পেরেছেন। বৈদিক পঞ্চশাখার পরম্পরাগত বা নিয়ম তান্ত্রিক ব্রাহ্মণেরা যে যে মতের সে সেই মত অনুযায়ী সাবিত্রী মন্ত্রকে ঠিক রেখে ধ্যানমূর্তির বদল করে নেয় এবং সেই মতে ধ্যান-জপ করে। এগুলি খারাপ কিছু নয়, নিষ্ঠাভরে স্ব-স্বমতের সাধন-ভজনে সাধকের প্রভূত উন্নতি হতে পারে, হয়ও। পূর্বে পূর্বে ব্রাহ্মণরাই তাে সমাজের সাধারণের কাছে “দেবতা" হিসাবে মান্যতা পেতো। তাদের সেইরকম যােগ্যতা থাকতো বলেই সমাজ তাদেরকে মান্য করতাে। কিন্তু এখন বংশ পরম্পরার ব্রাহ্মণদের (বামুন) আর সেই নিষ্ঠা নেই, ধ্যান-জপ বা সাধন-ভজন নেই, ফলে বর্তমান ব্রাহ্মণদের সমাজে আর সেই সম্মানও নেই। তবে প্রকৃতপক্ষে ব্রাহ্মণের সংজ্ঞা আলাদা। ‘ব্রহ্ম জানতি সঃ ব্রাহ্মণ’—যিনি ব্রহ্মকে জেনেছেন বা যাঁর আত্মতত্ত্বের বােধ হয়েছে তিনিই ব্রাহ্মণ। লােকনাথ বাবার জীবনীতে পাওয়া যায় যে লােকনাথ বাবা তাঁর জীবনে দেখা তিনজন ব্রাহ্মণের উল্লেখ করেছেন, তারমধ্যে একজনের নাম বলেছেন ‘আব্দুল গফুর'। তাহলে বুঝতে পারছেন তাে--জ্ঞানীদের চোখে বংশ পরম্পরায় ব্রাহ্মণদের কোন আলাদা স্থান নেই, তাঁরা প্রকৃত ব্রাহ্মণ অর্থাৎ ব্রহ্মবিদদেরকেই ‘ব্রাহ্মণ’ হিসাবে মর্যাদা দেন। আর তাই দেওয়াই উচিৎ। কেননা শ্রীমদ্ভাগবদ্গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণও বলেছেন—“চাতুবৰ্ণ্যং ময়া সৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ”। সমাজে চারটি বর্ণ আমি সৃষ্টি করেছি কিন্তু সেটি গুণ ও কর্মের (জন্ম নয়) বিভাগ অনুযায়ী। সুতরাং আপনি ব্রাহ্মণকুলে জন্ম গ্রহণ করেছেন ঠিকই কিন্তু ব্রাহ্মণের গুণাবলী যদি আপনার মধ্যে না থাকে, আপনি ব্রহ্মবিদ্ না হতে পারেন, যদি ব্রহ্ম বােধের জন্য ব্ৰতী না হন—তাহলে কিন্তু আপনি নিজেকে 'ব্রাহ্মণ’ বলার উপযুক্ত নন। তাই আপনার উচিত ব্রাহ্মণকুলে যখন জন্মগ্রহণ করেছেন তখন তার উপযুক্ত হয়ে ওঠা, ব্রাহ্মণােচিত কর্ম করে ধীরে ধীরে প্রকৃত ব্রাহ্মণ হয়ে ওঠা।
জিজ্ঞাসু (অন্য একজন) :– আপনি ত্রিসন্ধ্যা করতে বলেছেন–কিন্তু সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নানান কাজ-কর্ম এসব নিয়ে ব্যস্ত থাকি। তাই রাত্রে বাড়িতে এসে গায়ত্রী এবং সন্ধ্যাহ্নিক করি। তাহলে কি আমি ঠিক পথেই রয়েছি ?
গুরুমহারাজ–সে কি ! রাত্রে সাবিত্ৰীমন্ত্র (গায়ত্রী) জপ করে সন্ধ্যাহ্নিক করাে—এটা তােমাকে কে করতে বলেছে ? তােমার গুরুদেব ব্যাপারটা জানেন ? তিনি তােমাকে এটা করতে নিষেধ করেন নি ? এটা কক্ষনাে করােনা—এতে তােমার উপকার তাে কিছুই হবে না বরং তােমার ক্ষতি হবে। আচ্ছা সন্ধ্যাহ্নিক করাে বলছ–কিন্তু ‘সন্ধ্যা’ বলতে কি বােঝ তুমি ? ঠিক ঠিক সন্ধ্যা কখন কখন হয়, আর কেনই বা তাকে সন্ধ্যা বলা হয়—জানাে কি ? আচ্ছা আমি বলছি শােন, ঐ যে রামপ্রসাদের গানে রয়েছে না “সন্ধ্যা তার সন্ধানে ফেরে কভু সন্ধি নাহি পায়।” সন্ধি থেকেই ‘সন্ধ্যা’ কথাটা এসেছে। রাত্রি শেষ, দিন শুরুএই সন্ধিকাল হচ্ছে প্রথম সন্ধ্যার সময়কাল। দ্বিতীয় সন্ধ্যাকাল হচ্ছে দিনের প্রথম ভাগ ও দ্বিতীয় ভাগের সন্ধিক্ষণ, এটিকে মধ্যাহ্ন সন্ধ্যাও বলা হয়। এরপর হচ্ছে দিনের শেষ রাত্রির শুরু এই সন্ধিক্ষণ হচ্ছে তৃতীয় সন্ধ্যা। এবার ধ্যানের ব্যাপারটায় আসছি। ভােরে বা প্রথম সন্ধ্যাকালীন সময়ে ধ্যান করতে হয় মূলাধারে। ইড়া-পিঙ্গলা-সুষুম্না এই তিন নাড়ীর সন্ধিস্থল এটি। শাস্ত্রে একে ত্রিবেণী বলা হয়েছে এটি যুক্তবেণী। এরপর মধ্যাহ্নে ধ্যান করতে বলা হয়েছে অনাহতে। এটি ব্রহ্মগ্রন্থি ও বিষ্ণুগ্রন্থির সন্ধিস্থল। সায়ংকালে ধ্যান করতে বলা হয়েছে আজ্ঞাচক্রে। এটি বিষ্ণুগ্রন্থি ও রুদ্রগ্রন্থির সন্ধিস্থল। এখানেও ত্রিবেণী_ তবে তা মুক্তবেণী।
এইভাবে সদগুর স্থান-কাল-পাত্র ভেদে শিষ্যদেরকে ধ্যান-জপের ক্রিয়া দেন। সবাই যেহেতু একই স্বভাববিশিষ্ট হয় না, তাই গুরুপ্রদত্ত বীজমন্ত্র এবং সাধন-ভজনের প্রকারও ভিন্ন ভিন্ন হয়। কিন্তু তাই বলে–“ধ্যান-জপ বা বিভিন্ন সাধন ক্রিয়া যখন খুশি করলেই হয়”–এমনটা ভেবাে না ! প্রথমদিকে ঠিক ঠিক নিয়ম বা অনুশাসন না মানলে তাে মন্ত্রবৈরী হয়ে যাবে। ভালাে ফল না হয়ে খারাপ ফল ফলবে। তুমি ব্রাহ্মণ সন্তান হয়ে ত্রিসন্ধ্যা আহ্নিক বা ধ্যান-জপ কর নাই বা কেন ? তুমি কি কাজ কর ? ওঃ—ব্যবসা কর! দেখেছ ? তুমি বৈশ্যবৃত্তি অবলম্বন করে সংসার প্রতিপালন করছ। অথচ নিজেকে ‘ব্রাহ্মণ’- বলে পরিচয় দিচ্ছো, ব্রাহ্মণের পালনীয় আচারগুলি নিজে পালন করতে চাইছো ! তাহলে তাে সমস্যা হবেই! জানাে তাে বাংলায় একটা কথা আছে “উদোর পিণ্ড বুদোর ঘাড়ে” তােমারও সেইরকমই দশা। সন্ধ্যাহ্নিক কখন করার কথা আর তুমি কখন করছো ! রাক্ষসপূজার সময় দেবার্চনা করছো—তুমি যদি শুধু অন্তর্জগতের ধ্যান করতে তাহলে সময়ের বিধান খাটতাে না, কিন্তু তুমি তাে তোমার ঘরের ঠাকুর এবং বিগ্রহের অর্চনাও ঐ সময়ে করছো ! যে সময়ে তুমি দেবার্চনা করছো_বিভিন্ন মঠ-মন্দির ধর্মস্থানে তখন ঠাকুরকে শীতল দিয়ে বিশ্রামে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সুতরাং হয় তােমাকে বৈশ্যবৃত্তি ছাড়তে হবে। অথবা তােমাকে ব্রাহ্মণের ন্যায় নয়----বৈশ্যদের ন্যায় দেবার্চনা করতে হবে। বৈশ্যদেরও তাে ঈশ্বরলাভ হয়– হয় না কি ? তার অন্য বিধান আছে, আর ব্রাহ্মণের জন্য আলাদা বিধান ! আচ্ছা,তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করি___এই যে তুমি পুজো-আচ্চা, ধ্যান-জপ করছো, এতে কি তুমি কোন Taste পাচ্ছো ? যেমন মুখে শুধু ‘চিনি’, ‘চিনি’ বললে মুখ মিষ্টি হয় না—চিনি খেয়ে দেখতে হয়, তেমনি ধ্যান-জপ, পুজো-আচ্চা তুমি যাই করছো, তা থেকে যদি আনন্দের আস্বাদ পাও—তবেই তাে সেগুলি করার সার্থকতা! নাহলে তো শুধু অভ্যাসবশত বা সংস্কারবশত করে যাচ্ছো, ফল কিছুই হচ্ছে না ! দ্যাখো_পূর্বেকার ব্রাহ্মণের বৃত্তি ছিল যজন-যাজন ও অধ্যাপনা। এর বাইরে কোন কাজ তাঁরা করতেন না_অর্থাৎ তারা ব্যবসা-বানিজ্য বা বৈশ্যবৃত্তি অথবা চাখয়ি-বাকরি বা শুদ্রবৃত্তি করতেন না। তাই__ ব্রাহ্মণকুলে শরীর নেওয়াটাই বড় কথা নয়—গুণ এবং কর্ম দ্বারা 'ব্রাহ্মণত্ব' অর্জন করাটাই বড় কথা! নাহলে “ব্রাহ্মণকুলে জন্মেছি” এই অহংকার তােমার উপকার না করে সমূহ ক্ষতি করবে। ইষ্টলাভ না হয়ে তা অনিষ্টের কারণ হবে। জগতে প্রকৃত ব্রাহ্মণ কজন আছে বল ? বেশীরভাগই তাে জন্মসূত্রে বামুন ! সদগুরুর কৃপায়–অজ্ঞানতার অন্ধকার কেটে জ্ঞানচক্ষুর উন্মীলন ঘটলে তবেই তাে দ্বিজ—অন্যথায় আর কি ? যে কে সেই ! দ্বিজ মানে নতুন করে আর একবার জন্ম ! প্রকৃতপক্ষে তাই হয়_ জানাে ! এখন তােমরা যেভাবে এই পৃথিবীকে দেখছো---তখন সবকিছু অন্য মনে হয়। জগতের সব কালাে ধুয়ে সে যেন এক উজ্জ্বল আলাের জগতে—যেখানে সবই আলাে- সবাই ভালাে, তখন তোমার বোধে আসবে__ 'সবকিছুই সেই পরমেশ্বরের মূর্ত প্রকাশ', আরও বোধ হবে যে, "জগতে অন্য কিছুই নাই_আছে শুধু আনন্দ-আনন্দ আর আনন্দ!" এই দ্যাখাে এসব কথা বলতে বলতেই আমার শরীরে আনন্দের হিল্লোল বইতে শুরু করেছে—এখন ওসব কথা থাক্।
তাহলে তুমি কি বুঝতে পারলে—এতক্ষণ আমি কি বলতে চাইলাম ? তােমার গুণ এবং তােমার স্বভাব বা সংস্কার অনুসারে নির্দিষ্ট কর্ম অনুযায়ী তুমি ধর্মাচরণ করাে অথবা তােমার স্বভাব-ধর্ম অনুযায়ী তুমি কর্ম করাে—এতেই তােমার সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল হবে।