গৃহ যবে হল মোর বৈকুণ্ঠ ধাম – ন’কাকা

[ভূমিকা]১৩৮৫(ইং-১৯৭৮) সালের ১৪ ই বৈশাখ-শুক্রবার, বৈকাল ৫ টা ৩০ মিনিটে আমাদের এই ভাঙ্গাঘরে চাঁদের আলাের মতাে আবির্ভূত হলেন এক মহামানব। এই মহামানবের সঠিক পরিচয় কি তা হয়তাে প্রকাশ হতে দেরী ছিল কিন্তু আমার তখন মনে হয়েছিল যে, তিনি ভক্তের কাছে প্রকাশমান হবেন বলেই অবতীর্ণ হয়েছেন।আমার বড় দাদা শ্ৰীযুক্ত দেবীপ্রসাদ মুখােপাধ্যায় — যিনি মধ্যমগ্রাম হাই-স্কুলের শিক্ষক ছিলেন, তাঁরই ঐ গ্রামের ছাত্র তৃষাণ বা জয়দেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীদেবেন্দ্রনাথ, কোলকাতার শ্ৰীসম্বিত সেন, স্বামী...

read more

গুরুমহারাজ১৩৮৫ (১৯৭৮) সালের ১৯ শে বৈশাখ বুধবার সকালে উঠে সকলকে সুপ্রভাত জানালেন। তারপর শৌচ ও স্নান সেরে এবং একটু চা পান করার পর ঈশ্বরীয় প্রসঙ্গ শুরু করে দিলেন। ঐ দিন উনি হুঁকাতে তামাক খাবার ইচ্ছা প্রকাশ করায় মিহির (স্বামী প্রজ্ঞানন্দ) বাড়ীতে থাকা পুরােনাে হুঁকাগুলি পরিষ্কার করে তাঁর তামাক খাবার ব্যবস্থা করে দিল। বেলা ১১ টার সময় মােহন কবিরাজ (উনি পােষ্ট অফিসের পিওন ছিলেন) এসে তাঁর সঙ্গে ধর্মালােচনা শুরু করলেন এবং আলােচনায় খুবই আনন্দিত হলেন। এরপর দেবেন্দ্রনাথ হুগলীর সিঙ্গুর থেকে শংকরানন্দ...

read more

১৯শে বৈশাখ (১৩৮৫ সাল ), বিকালে কিছু জলযােগ গ্রহণ করার পর স্বামী শংকরা নন্দ মহারাজ এখানে (বনগ্রামে) এসে যে খুবই সন্তষ্ট হয়েছেন তা প্রকাশ করলেন। সন্ধ্যা আগতপ্রায় দেখে সকলে ৺মাতা করুণাময়ীর মন্দিরে এসে উপস্থিত হলেন এবং শুরু হল নিত্য-নৈমিত্তিক প্রার্থনাসংগীত—‘জয় জয় শিবদুর্গা শিবদুর্গা দুর্গা দুর্গা শিব শিব, শিবকালী শিবকালী কালী কালী শিব শিব ।' সাক্ষাৎ শিবস্বরূপ রবীনের (গুরুমহারাজের) উপস্থিতিতে সে সময় মন্দির প্রাঙ্গণ যে কি ভাবগম্ভীর পরিবেশে পূর্ণ থাকত এবং উপস্থিতজনেরা যে কি এক অপার্থিব...

read more

মাতরিশ্রীর আশীর্বাদ প্রাপ্তির পর দেবেন্দ্রনাথের সঙ্গে রবীন শৈলশিখরে সিদ্ধপীঠ কনকদুর্গা-মায়ের দর্শনের জন্য গিয়েছিলেন । পরে ওনাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল—কনকদুর্গামূর্তির বৈশিষ্ট্য কি ? উত্তরে উনি বলেছিলেন, “মহামায়ার অনন্ত ইচ্ছা – মহাপ্রকৃতির কখন যে কি বৈশিষ্ট্য তা একমাত্র শিবই জানেন, জীব কি তা জানতে পারে ? ওইজন্য বাউল গানে রয়েছে–‘শিব জানে না যে সব তত্ত্ব জীবে জানবে কি করে ?' শিবস্থিতিতে পৌঁছালে তবেই মহাপ্রকৃতির রহস্য উদঘাটন করা যায় । যাইহােক ওখানে মায়ের রূপ অপূর্ব, দেবী অষ্টভূজা, ভীমা...

read more

ভগবানের মুখে ভক্তের লীলা-কাহিনী শুনতে শুনতে মন তন্ময় হয়ে যায়৷ জিজ্ঞাসা করলাম, “ বাবাঠাকুর! নামদেবের জীবনে আর কি কি অলৌকিক ঘটনা ঘটল, যাতে ভক্তসমাজ তাঁর উপর গভীরভাবে শ্রদ্ধাশীল হয়ে উঠল?” ঠাকুর বলতে লাগলেন :-- সে এক অপূর্ব লীলা! দাদু বামদেব সহজে ছাড়বার পাত্র নয়, বললেন — 'সবই তো বুঝলাম ভাই, কিন্তু নিজের চোখে না দেখলে পূর্ণ বিশ্বাস আসবে না যে!' 'ঠিক আছে চোখেই দেখাবাে' নামদেব এককথায় রাজি। তবে একটা শর্ত আছে — বিশুদ্ধ অন্তঃকরণ নিয়ে পাশে বসে থাকতে হবে, চিত্তহ্রদে বিষয়ের ঢেউ উঠলে হবেনা। দাদু...

read more

বাবাঠাকুর (গুরুজী) বলতে লাগলেন :–লীলাবহুল জীবন এই নামদেবের। একদিন একাদশী তিথিতে উপবাসী নামদেবের কাছে এক অতিথি এসে হাজির, এসেই তিনি নামদেবের কাছে কিছু খেতে চাইলেন। অনেক বুঝিয়েও নামদেব তাকে শান্ত করতে পারেন না। অতিথিও নাছোড়বান্দা। তিনি ক্ষিদের কথা বারবার বলছেন। এই অবস্থায় হঠাৎ অতিথিটি পা পিছলে পড়ে যান। আচমকা পড়ে যাওয়ায় এবং ক্ষুধার্ত ও দুর্বল থাকায় সেই অতিথি ব্রাহ্মণ মারা যান। এতে নামদেব ব্যাকুল হয়ে পড়েন এবং প্রতিবেশীরাও এসে নামদেবকে তিরস্কার করতে থাকে। নিদারুণ দুঃখ নিয়ে নামদেব সেই...

read more

বৈষ্ণব বাবার কথা বলতে বলতে গুরুজী বৈষ্ণবতত্ত্বের গভীরে প্রবেশ করতে লাগলেন। বৈষ্ণববাবা ছিলেন প্রকৃতই তত্ত্বজ্ঞানী, ফলে পরম ছলনাময় গুরুজীর স্বেচ্ছাপ্রসূত জিজ্ঞাসাসমূহের যথার্থ মীমাংসা করতে করতে তিনিও তত্ত্বের গভীরে ঢুকতে লাগলেন।বৈষ্ণববাবা বলতে লাগলেন– দেখুন ভগবান ভক্তের জন্য কি না করতে পারেন, কিন্তু এটা জেনে রাখুন প্রকৃত ভক্ত হওয়া শক্ত কথা। ভগবান সর্বদাই ভক্তের মনোবাসনা পূর্ণ করার জন্য ব্যস্ত। গুরুজী এসব শোনার পর বললেন– আপনার কাছে ভক্ত-ভগবানের লীলামাধুর্য শুনে খুবই আনন্দ লাগল। কিন্তু আমার মনে...

read more

" বাঙালীর হিয়া অমিয় মথিয়া নিমাই ধরেছে কায়া।" মহাপ্রভু নবদ্বীপ লীলায় সুরধুনীর তীরে তীরে, তাঁর তরঙ্গের সুরে সুরে — উদাত্তকণ্ঠে মধুর নাম গান করতে করতে দীর্ঘপথ পরিক্রমা করতেন উন্মাদের মতো। পরে যখন প্রভুর চিত্ত শান্ত হতো তখন তিনি দেখতেন সেই মনােমােহন কীর্তনের সুরকে অনুসরণ করে ভক্তবৃন্দেরা এসে জড়াে হয়েছে তাঁর চারপাশে। প্রভুর প্রেমে আর নামের মহিমায় তারাও মাতােয়ারা, নৃত্যরত।গুরুজী মহাপ্রভুকে নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আলোচনা করেছিলেন — সে আলোচনায় মন চলে যেতো নবদ্বীপ-শান্তিপুরের পথে পথে।...

read more

পরমানন্দ কথা-সুধা কি একমুখে বলা যায়। তবু তাে সেই সুধার কিছুটা ভক্তজনকে পান করানাে যায় -- সেই আনন্দেই আবার তাঁর কথার অবতারণা করতে বসা। গুরুমহারাজ বনগ্রামে থাকলে তখন প্রায় প্রতিদিনই সন্ধ্যার সময় বাড়িতে আসতেন। কখনাে কখনাে বিভিন্ন ভক্ত-সঙ্গে, কখনও বা একাই চলে আসতেন। বাড়িতে আসার পর কোন কোন দিন নানান প্রসঙ্গ আলোচনা করতেন — কারও কোন জিজ্ঞাসা থাকলে তার উত্তর দিতেন, কখনও আবার নিজে-নিজেই প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বলে যেতেন–চলে যেতেন কোন অচিন রাজ্যে আর সেখান থেকেই যেন অচিন খবর তুলে তুলে নিয়ে আসতেন...

read more

ভগবৎ-লীলা যত প্রচার হতে লাগল লােকজন ততই বাবাঠাকুর পরমানন্দের কাছে ভিড় জমাতে থাকল। নানান সম্প্রদায়ের মানুষ, শাক্ত, শৈব, বৈষ্ণব ইত্যাদি তাে বটেই মুসলমান বা খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের ধর্মপ্রাণ মানুষেরাও বাবাঠাকুরের কাছে নানান জিজ্ঞাসা, নানান সমস্যা নিয়ে আসতে লাগল। আর বাবাঠাকুর বেশ সহজ ও সরল ভাষায় তাদের সমস্ত সমস্যার সমাধান করে দিতে লাগলেন। কিন্তু কিছু ভক্ত ঠাকুরের এই অসাধারণ ভাব দেখে মােহিত হয়ে ২/৪ দিন করে আশ্রমে থেকে যেতে লাগল। যেখানে মনের মানুষ পাওয়া যায় সেখানেই তাে সুধীজনের আগমন হয়,...

read more

ভক্ত– ধর্ম কাকে বলে ?উত্তর– ধর্ম বলতে বুঝায়, যা জীবজগৎকে ধরে রেখে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করছে। এ ছাড়া ধর্ম হল জীবনের কলা।ভক্ত– পূজা-জপে কি ভগবানকে লাভ করা যায় ?উত্তর– দেখ বাবা, সবের মূলেই হল ভক্তি, নিজেকে যতক্ষণ পর্যন্ত না দেবভাবাপন্ন করতে পারা যায় ততক্ষণ ভগবান লাভ করা যায় না। জপে দেহ-মন শুদ্ধ হয় এবং ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন দেহ মন্দির আর তিনি শুদ্ধমনের গােচর।ভক্ত– বাবা গুরুকরণ করতে হয় কেন ?উত্তর– গুরুকরণ না করলে ভক্তকে কে জ্ঞানের আলো দেখাবে, কে শিষ্যকে মৃত্যুর পথ থেকে অমৃতের পথে নিয়ে...

read more

শ্রীশ্রীগুরুমহারাজ আশ্রমে থাকলে সুবাসিত কুসুম প্রস্ফুটিত হলে যেমন অলিকুলের গুঞ্জনে স্থানটি মুখরিত হয়ে থাকে, ঠিক তেমনি বনগ্রামের আশ্রম-প্রাঙ্গণ ভক্তজনের সমাগমে এবং তাদের সদালাপে সদাসর্বদা মুখরিত হয়ে থাকত। বাবাঠাকুরের নয়নমনােহর রূপের ছটায় প্রভাত সূর্যের আলােকও যেন ম্লান হয়ে যেত আর তাঁর মুখনিঃসৃত প্রজ্ঞাঘন বাণী শ্রবণ করে ভক্ত-জিজ্ঞাসুরা বিস্মিত ও পুলকিত হয়ে উঠত। নানান দৃষ্টিকোণ থেকে বিভিন্ন বিষয়ের বিভিন্ন জিজ্ঞাসার উত্তর তিনি এমন অবলীলাক্রমে দিতেন যে, যারা এটা না দেখেছে তাদের বিশ্বাস করা...

read more

জিজ্ঞাসা– আচ্ছা বাবা, আপনি রস-সাধনার ধারাকে অব্যাহত রাখতে বিল্বমঙ্গল আদি পঞ্চরসিককেই কেন নির্বাচন করলেন ?উত্তর– ভারতবর্ষে রস-সাধনার ধারাকে বিশেষভাবে ধরে রেখেছিলেন এবং এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন এই পাঁচজনই। এই পঞ্চসিকের রসতত্ত্ব বা রস-রতিতত্ত্ব বাউল সাধনার এক অতি গুহ্য ও দুরূহ সাধন-প্রণালী । নারী এবং পুরুষের প্রাকৃত প্রেম বা ভালবাসাকে অবলম্বন করে অপ্রাকৃত রাধাতত্ত্বে বা কৃষ্ণতত্ত্বে পৌঁছানাে প্রকৃত অর্থেই এক অতি দুরূহ ও দুর্লভ সাধন প্রক্রিয়া। এঁরা পাঁচজন এই দুরূহ দুর্গম পথ অতিক্রম করতে সমর্থ...

read more

শ্রীশ্রীগুরবে নমঃমহাকবি জয়দেব তার শ্রীশ্রীগীতগােবিন্দম ’ গ্রন্থের ১ম সর্গে লিখেছেন:“ যদি হরিস্মরণে সরসং মনােযদি বিলাস কলাসু কুতুহলম্।মধুর কোমলকান্তপদাবলিংশৃণু তদা জয়দেবসরস্বতীম্ ৷৷”– 'যদি হরিস্মরণে মন সরস করিতে চাও, যদি তাঁহার বিলাসকলা জানিবার কৌতূহল থাকে, তবে জয়দেবের মধুর কোমলকান্ত পদাবলী শ্রবণ কর।'জিজ্ঞাসা — আচ্ছা বাবা, ভক্ত জয়দেব এবং তাঁর রচিত কোমলকান্ত পদাবলী সম্পর্কে যদি কিছু বলেন তাহলে খুবই আনন্দিত হই।উত্তর — সে অনেকদিনের পুরানাে ঘটনা। তখন বাংলাদেশের সেন রাজারা রাজত্ব করতেন। বাংলার...

read more

জিজ্ঞাসা— জয়দেব বিরচিত 'গীতগােবিন্দম্' সম্বন্ধে কিছু যদি বলেন, তাহলে বড়ই কৃতার্থ হই।উত্তর— কবি জয়দেব প্রণীত 'গীতগােবিন্দম্' গ্রন্থের প্রথম সর্গের নাম ‘সামােদদামােদরঃ'। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ অনুযায়ী শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাসের উল্লেখ করেছেন কবি তাঁর এই অমর কাব্যে। শ্রীমদ্ভাগবতের শারদ-রাস এটি নয়। রসিকশেখর শ্রীকৃষ্ণ বিভিন্ন সখীদের নিয়ে আমােদে মেতেছেন তাই এইরূপ নামকরণ। কাব্যের দ্বিতীয় সর্গের নাম ‘অক্লেশকেশবঃ'। গােপিগণপরিবৃত হয়েও শ্রীকৃষ্ণ হৃদয়ে রাধিকাকেই স্মরণ করছিলেন—সকলের ক্লেশহরণকারী কেশবকে...

read more

'‘মাধব বহুত মিনতি করি তােয়।দেই তুলসি তিল দেহ সমর্পিলুদয়া জনু ছােড়বি মােয়।৷ভনয়ে বিদ্যাপতি অতিশয় কাতরতরইতে ইহ ভবসিন্ধু।তুয়া পদপল্লব করি অবলম্বনতিল এক দেহ দীনবন্ধু ।৷''জিজ্ঞাসা— আচ্ছা মহাশয়, বিদ্যাপতির পরমেশ্বরের কাছে এই যে সকাতর প্রার্থনা তাঁর কৃপাপ্রাপ্তির জন্য, এই প্রার্থনা কি দীনবন্ধু পূর্ণ করেছিলেন? এই বিদ্যাপতির বিশেষ পরিচয় কি ?উত্তর— যে বিদ্যাপতির কথা বলছো ইনি একজন, শ্রীকৃষ্ণ-প্রেমিক প্রাচীন মৈথিলী কবি, ভক্ত এবং সুপণ্ডিত। তাঁর জন্মস্থান ও জন্মকাল সঠিকভাবে নির্ণীত হয় নি। তবে...

read more

ভারতবর্ষ পুণ্যভূমি। যুগে যুগে কালে কালে অসংখ্য ঋষি, মুনি, তাপস, যােগী, মহাযােগী ও সাধক-মহাপুরুষেরা এসেছেন পরম্পরায়। মহাপুরুষদের জীবন লােকোত্তর। তাঁরা আবির্ভূত হন মানুষের জীবনে আধিভৌতিক, আধিদৈবিক ও আধ্যাত্মিক—এই ত্রিবিধ তাপ নাশ করার জন্য। মনের সংকীর্ণতা ও স্বার্থপরতা দূর করে সমাজকে ধর্মের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য আবির্ভূত হন তাঁরা কালে কালে। কালকে জয় করেছেন এমন কিছু মহৎ ব্যক্তি, তাঁরাই হলেন কালজয়ী পুরুষ। এইসব ব্যক্তিরা বনে-জঙ্গলে, গিরি-গুহায়, লােকচক্ষুর অন্তরালে বা কোন নির্জনস্থানে বসে...

read more

পূণ্যভূমি এই বঙ্গদেশ। কত ঋষি, মুনি, যােগী, মহাযােগী এই বঙ্গভূমিতে আবির্ভূত হয়ে গেছেন তা বলা সম্ভব নয়। পতিতপাবনী গঙ্গার চরণ স্পর্শে ধন্য হয়েছেন এই বঙ্গ সন্তানগণ। কালে কালে যুগে যুগে এই মহাজনরা বঙ্গমাতার রত্নভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করার জন্য এখানে আবির্ভূত হয়ে তাঁদের প্রেমের ফসল বিতরণ করে কালজয়ী হয়ে কালগর্ভে নিপতিত হয়েছেন, রেখে গেছেন অমরকীর্তি। এইরূপ এক কীর্তিমান কালজয়ী পুরুষ অবধূত নিত্যানন্দ। প্রেমের অবতার শ্রীগৌরাঙ্গের আবির্ভাবের কিছু পূর্বে তিনি আবির্ভূত হন বীরভূমের একচক্রা গ্রামের হাড়াই...

read more

“হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।হরে রাম হরে রাম, রাম রাম হরে হরে।”–এই মহামন্ত্র সংকীর্তনের মাধ্যমে প্রচারের আদেশ দিলেন মহাপ্রভু নিত্যানন্দকে। মানুষ বলে—“নিতাই নাম এনেছে", ‘গােলকে গােপনে ছিল, নিতাই এনে বিলাইল’, ‘হরিনাম দিয়ে জগৎ মাতাল আমার একলা নিতাই'। কিন্তু নিতাই কোথা থেকে পেল ? না গুরু-পরম্পরার কাছ থেকে। কিন্তু যেহেতু নিতাই সর্বসাধারণের কাছে ঐ মহাবীজ, কলিযুগের মহামন্ত্র তারকব্রহ্ম নাম বিতরণ করলেন—তাই মানুষ আজও কৃতজ্ঞচিত্তে নিতাই-এরই জয়গান করে। বলে—“নিতাই-গৌর হরিবােল” অথবা “জয়...

read more

ঈশ্বর চির প্রকাশমান। তাঁর প্রকাশটা নরলীলায় বেশী বােঝা যায়। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ যেমন বলতেন, দেখাে সূর্যের প্রকাশ সর্বত্রই কিন্তু কাঁচের মধ্যে দিয়েই সেটা বেশী প্রতিফলিত হয়। তাই এই নরলীলাকে অবলম্বন করেই তিনি বেশী প্রকাশিত হন। এই মনুষ্যশরীরে এসেই তিনি ভগবানের জয়গান করে যান, নিজে সাজেন, মানুষকে সাজান।যখনই ধর্মের মধ্যে গ্লানি আসে তখনই তিনি আবির্ভূত হন, ধর্মের গ্লানি অপসারিত করে ধর্মের পুনঃস্থাপন করতে। গৌরসুন্দর লীলা শুরু করেছিলেন নবদ্বীপে আর শেষ করেছিলেন নীলাচলে। তাঁকে নিয়ে যে “পঞ্চতত্ত্ব",...

read more

বৈষ্ণবশাস্ত্রে সাধকদের উদ্দেশে কয়েকটি অপরাধের কথা বলা হয়েছে। যেমন সেবা-অপরাধ, বৈষ্ণব-অপরাধ ইত্যাদি। এর মধ্যে বৈষ্ণব-অপরাধ অন্যতম বড় অপরাধ। গুরুজনের সেবা করতে গিয়ে যদি কোন ত্রুটি হয় সেটা সেবা-অপরাধ। নিষ্ঠা সহকারে সেবার দ্বারাই সেবা-অপরাধ দূরীভূত হয়। কিন্তু বৈষ্ণব- অপরাধের মার্জনা করা বিষ্ণুরও হাতে নয়। যে বৈষ্ণবের নিকট এ অপরাধ করা হয়েছে একমাত্র তিনি ক্ষমা করলেই তবে এই অপরাধের মার্জনা হয়। সনাতন গােস্বামীকে মহাপ্রভু আদেশ করেছিলেন—লুপ্ততীর্থ উদ্ধারের জন্য বৃন্দাবন বাসের। শ্রীসনাতন...

read more

“বন্দে তং শ্রীমদদ্বৈতাচাৰ্য্যমদ্ভুতচেষ্টিতিম্।  যস্য প্রসাদদিজ্ঞােহপি তৎস্বরূপং নিরূপয়েৎ।” –'যাঁহার প্রসাদে অতি অজ্ঞ ব্যক্তিও তাঁহার (শ্রীভগবানের) স্বরূপনিরাপণে সমর্থ হয়, সেই অদ্ভুতলীলাশালী শ্রীমৎ অদ্বৈত আচাৰ্য্যকে আমি বন্দনা করি।' –এটি লিখেছেন চৈতন্য চরিতামৃতকার শ্রীশ্রীকৃষ্ণদাস কবিরাজ মহাশয়। মহাবৈষ্ণব ছয় গোঁসাই-এর অন্যতম শ্রীরূপ গােস্বামী অদ্বৈতকে বন্দনা করেছেন–  “মহাবিষ্ণুর্জগৎ-কৰ্ত্তা মায়য়া যঃ সৃজত্যদঃ।    তস্যাবতার এবায়মদ্বৈতাচাৰ্য্য ঈশ্বরঃ।৷   অদ্বৈতং...

read more

‘ ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে ’– শ্রীশ্রীগীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং একথা বলেছেন। পুণ্যভূমি ভারতে ত্রিতাপ জ্বালা নিবারণের জন্য ভগবান যুগে যুগে ধর্মসংস্থাপনের জন্য অবতীর্ণ হয়েছেন ও হচ্ছেন। তিনি ভক্তবাঞ্ছাকল্পতরু, ভক্তের মর্যাদা রক্ষা এবং ধর্মের গ্লানি অপনােদন করার জন্য এই মর্তধামে বিভিন্নরূপে বিভিন্ন নামে লীলা করে চলেছেন। কখন কিরূপে এবং কিভাবে অবতীর্ণ হবেন সেটা তাঁর নিজের হাতে। জীব-জগতের আকুল আবেদনে তিনি সাড়া দেন, ভক্তবাঞ্ছা তিনি পূরণ করেন আর মনুষ্যশরীরে এসে সম্পূর্ণরূপে মানুষেরই...

read more

“বাঙালীর হিয়া অমিয় মথিয়া নিমাই ধরেছে কায়া”—কবির এই ভাবনাকে আমরা মর্যাদা দিই। নিমাই চরিতকথা আর তাঁর পার্ষদদের কথা যতই আলােচনা হােক, যতই পড়া বা শােনা হােক—বাঙালীর হিয়া বা হৃদয় যেন পূর্ণ হতে চায় না, কেমন যেন অতৃপ্তির ভাবটা থেকেই যায়। আমাদের ঠাকুর পরমানন্দ বলেছিলেন—ব্রহ্ম অব্যক্ত কিন্তু প্রসাদরূপে তাঁর আভাস মহাজন মুখ থেকে কিছুটা পাওয়া যায়। তাই চৈতন্যলীলার আভাসও আমরা বিভিন্ন মহাজন গ্রন্থ থেকে যেটুকু পেয়েছি আর আমাদের পরমারাধ্য গুরুমহারাজের নিকট যেটুকু শুনেছি—তাই পরিবেশনের প্রয়াস...

read more

‘শ্রীগৌরাঙ্গের দুটিপদ যার ধনসম্পদ,সে জানে ভক্তি রস-সার।শ্রীগৌরাঙ্গের মধুর লীলা যার কর্ণে প্রবেশিলাহৃদয় নির্মল ভেল তার।'–শ্রীগৌরাঙ্গরসে যাঁরা নিজেকে সিক্ত করতে পেরেছেন, তাঁরাই গৌরাঙ্গের মাধুর্য আস্বাদন করেছেন, গৌরলীলার অমৃতকথা, গৌরাঙ্গের দেওয়া মহানাম তাঁদেরই কানের ভিতর দিয়ে মর্মে প্রবেশ করেছে। তাই তাে তাঁরা ঘরে থাকতে না পেরে লীলা আস্বাদনের জন্য প্রভুর শরণাপন্ন হয়েছেন, যাতে করে তাঁরা মহাজনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে নিজেদের জীবনকে ধন্য করতে পারেন। এই ভক্তরাই বলতে পারেন–শ্রীগৌরাঙ্গের দুটিপদই তাঁদের...

read more

"ঈশ্বর পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ।অনাদিরাদির্গোবিন্দঃ সর্বকারণকারণম্।"–ব্রহ্মসংহিতা (৫/১)–সচ্চিদানন্দ শ্রীকৃষ্ণই পরমেশ্বর। তিনি সকলের আদি। কিন্তু তাঁর আদি কেউ নেই, তিনি গােবিন্দ এবং সর্ব কারণেরও তিনি কারণ। এই সচ্চিদানন্দ শ্রীকৃষ্ণেরই লীলারূপ ভগবান শ্ৰীকৃষ্ণচৈতন্য বা মহাপ্রভু। অন্তঃকৃষ্ণ বহিঃরাধা রূপে তিনি নবদ্বীপে লীলারত। আর তাঁরই অন্তঃরূপ অর্থাৎ রাধারূপ পরিগ্রহ করে লীলা করছেন গদাধর। ছায়াসঙ্গী হয়ে নিমাই-এর সাথে সাথে থাকেন তিনি। কিন্তু যখন নিমাই সন্ন্যাস নিলেন কাটোয়ায় গিয়ে কেশব ভারতীর...

read more

বন্দে গুরুনীশভক্তানীশমীশাবতারকান্‌।তৎপ্রকাশাংশ্চ তচ্ছক্তীঃ কৃষ্ণচৈতন্যসংজ্ঞকম্ ।৷—শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত (আঃ-৩৪)চরিতামৃতকার কৃষ্ণদাস গুরুকে, ভগবানের ভক্তকে, তাঁর অবতারদের, তাঁর প্রকাশ নিত্যানন্দকে, তাঁর শক্তি গদাধরাদিকে এবং স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যরূপ ভগবানকে বন্দনা করে তাঁর বিখ্যাত বৈষ্ণকসমাজের আকরগ্রন্থ শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত শুরু করেছিলেন। আমরাও এখানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য বা শ্রীমন্মহাপ্রভুর লীলাপার্ষদদের কিছু কিছু লীলাকাহিনী বর্ণনা করার চেষ্টা করেছি। এখন শুরু করছি ছয় গোঁসাই-এর অপূর্বলীলাকাহিনীর...

read more

"যস্যাস্তি ভক্তিৰ্ভগবত্যকিঞ্চনা, সর্বৈগুণৈস্তত্র সমাসতে সুরাঃ।হরাবভক্তস্য কুতাে মহদ্গুণা, মনােরথেনাসতি ধাবতাে বহিঃ।৷"—শ্রীমদ্ভাগবত (৫।১৮।১২)–‘ভগবানে যাঁর অহৈতুকী ভক্তি আছে, সমস্ত দেবগণ সমস্ত গুণের সঙ্গে তাঁতে অটলভাবে অবস্থান করেন। যে ব্যক্তি হরিভক্ত নয়, মনােরথ সাহায্যে সর্বদা বাইরের বিষয়ে ধাবমান—সে ব্যক্তি মহজনােচিত গুণরাশির অধিকারী কিরূপে হবে ?'রূপ ও সনাতনের ঈশ্বরের প্রতি অহৈতুকী ভক্তি সতত বিরাজমান—তাই তাঁদেরও গুণের সীমা নেই। সর্বদেবতার গুণ যেন তাঁদের মধ্যে বিরাজমান। তাই তাে তাঁরা...

read more

"পঞ্চদীর্ঘঃ পঞ্চসূক্ষ্মঃ / সপ্তরঞ্জঃ ষড়ুন্নত।ত্রিহ্রস্বপৃথুগম্ভীরাে / দ্বাত্রিংশল্লক্ষণাে মহান্ ।৷"–'যাঁর নাসিকা, হস্ত, হনু, নয়ন ও জানু দীর্ঘ, ত্বক, কেশ, অঙ্গুলীর পর্ব, দন্ত ও রােম সূক্ষ্ম ; নয়নের প্রান্তভাগ, চরণতল, করতল, তালু, ওষ্ঠাধর, জিহ্বা ও নখ এই সপ্তস্থান রক্তিম আভাযুক্ত; বক্ষস্থল, স্কন্ধ, নখর, নাসা, কটিদেশ ও মুখ সমুন্নত ; গ্রীবা, জঙ্ঘা ও লিঙ্গ এই তিনটি অঙ্গ খর্ব ; কটিদেশ, ললাট ও বক্ষস্থল বিশাল এবং নাভি, স্বর ও বুদ্ধি এই তিনটি গাম্ভীর্যযুক্ত; এইরূপ দ্বাত্রিংশ লক্ষণ দ্বারা বুঝা যায় যে...

read more

রূপ-সনাতনকে বৃন্দাবনে পাঠাবার সময় - মহাপ্রভু বলে দিয়েছিলেন তাঁরা যেন শ্রীধামে তাঁর দীন ভক্তদের আশ্রয়স্থল হন। প্রভুর এই মহাবাক্য শিরােধার্য হয়েছিল রূপের জীবনে। ভগবান শ্রীচৈতন্যদেবের প্রচারিত উপদেশ বিতরণের ফলে দলে দলে ভক্তগণ নানাদিক থেকে বৃন্দাবনে আসছিলেন আর রূপ গােস্বামী অগ্রণী ও উদ্যোগী হয়ে তাঁদেরকে অভ্যর্থনার সঙ্গে তত্ত্ববধানও করছিলেন। যিনি যেমন প্রকৃতির লােক, তাকে সেইভাবে কুটির বাঁধতে দিয়ে সকলের অভাব- অভিযােগ শুনে তাঁদের সুমীমাংসা করে অল্পদিনের মধ্যেই রূপ গােস্বামী বৈষ্ণবমণ্ডলীর কর্তা...

read more