স্থান:–করুই-গ্রাম(পূর্ব বর্ধমান),২৮-শে নভেম্বর,১৯৯১.
উপস্থিত ব্যক্তিগণ:– করুই গ্রামের-এর ভক্তবৃন্দ, সব্যসাচী মান্না, তপিমা, দীপ্তি মহারাজ, গোবিন্দ দা(মালতীপুর,ধাত্রিগ্রাম) প্রমুখরা।
[গুরু মহারাজ করুই-গ্রামে তপিমা-দের মামার বাড়িতে এসেছিলেন ! ওখান থেকে ওই গ্রামের একজন মাস্টারমশাইয়ের বাড়িতে দোতলার একটা ঘরে উনি তখন সিটিং করছিলেন ! এমন সময় তপিমা (পবিত্রপ্রাণা, যিনি গুরু মহারাজের সাথেই এসেছিলেন কিন্তু উনি মামার বাড়িতেই থেকে গিয়েছিলেন) সিঙ্গুরের সব্যসাচী মান্নাকে নিয়ে গুরু মহারাজের কাছে এসে বললেন_” বাবা ! এই দ্যাখো, সব্যদা তোমার কাছে আসবে বলে –প্রথমে বনগ্রামে গিয়েছিল, কিন্তু তুমি ছিলেনা বলে ওখান থেকে দীপ্তি দা(ভূমানন্দ মহারাজ)সঙ্গে করে ওকে এখানে নিয়ে এসেছে ! ওর দাঁতে কি একটা infection হয়েছে, কথা বলতেই পারছে না !” —সব্যদা মুখে রুমাল চাপা দিয়ে তপিমার পিছনে দাঁড়িয়ে ছিল ! এবার গুরুজীর কাছে এসে বসতেই দেখা গেল ওর মুখটা খুবই ফুলে উঠেছে ! সত্যি সত্যিই সব্যদা ভালো করে কথাও বলতে পারছিল না ! যেটুকু “দ-দ” করে জড়িয়ে-মরিয়ে বললো, তাতে বোঝা গেল__বেশ কয়েকদিন ধরে সে অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করেছে, নানা রকম ওষুধ খেয়েও ব্যাথা কমেনি ! দু-তিন রাত ঘুমাতেও পারেনি ! সব্যদার ধারণা হয়েছে __যে ওর হয়তো ক্যান্সার হয়েছে। এই সব কথা শুনে গুরুজী সব্যদার গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে নানান সান্ত্বনা দিলেন এবং দীপ্তি মহারাজকে বললেন, ‘ওকে ভিতরে নিয়ে যেতে এবং কুসুম গরম জলে মুখ ধুয়ে গরম গরম লিকুইড কিছু খেতে দিতে’ ! তারপর গুরু মহারাজ, ওর চিকিৎসা কিভাবে করা হবে তাও দীপ্তি মহারাজ(আশ্রমের দাতব্য চিকিৎসালয়ের ডাক্তার)-কে বলে দিলেন ! ওরা চলে যাওয়ার পর গুরুমহারাজ কথা বলতে শুরু করলেন….]
গুরু মহারাজ:—-মানুষ নিজে নিজেই তার স্বাস্থ্যের বারোটা বাজায়__প্রায় প্রতিটি মানুষ শুধুমাত্র অনিয়মিত জীবন-যাপন করে এবং উল্টোপাল্টা খাদ্য গ্রহণ করে ! আর এই উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনের জন্য‌ই মানুষ বিভিন্ন রোগব্যাধিকে তার জীবনে ডেকে আনে ! Food habit and Life style–এই দুটোকে ভারতীয় শাস্ত্রে “যম ও নিয়ম”- বলা হয়েছে ! এই দুটোর পরিবর্তন খারাপ দিকে হোলে দ্যাখা যায়__ এক একজন ব্যক্তির জীবন যেমন নীতিভ্রষ্ট হয়েছে, তেমনি সামগ্রিক অর্থে একসাথে এইরকম পরিবর্তনে সমগ্র একটা জাতির জীবনে__ঐ জাতিটার‌ই অনেক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে ! ভারতবর্ষে এই যে একটা বিশেষ community-র মধ্যে আজকাল দেখা যাচ্ছে_ কুষ্ঠরোগ, বন্ধ্যাত্ব,শ্বেতী ইত্যাদি রোগ-ব্যাধি এবং তৃতীয় লিঙ্গ বা হিজরেদের সংখ্যা দারুণভাবে বেড়ে যাচ্ছে__ সেটা শুধুমাত্র ওই community-র অন্যদেশের Food habit and Life style গ্রহণ করার জন্য। বিশেষতঃ রক্তের সম্পর্ক বা এক‌ই পরিবারের লোকেদের মধ্যে বিবাহ __ইত্যাদিগুলি হঠাৎ করে চালু করার জন্যই এইসব হোচ্ছে ! তাও তো এরা এটা মাত্র কয়েকশো বছর হোলো পাল্টেছে, তাতেই এইসব নানান সমস্যা দেখা দিয়েছে ! তাহলে ভাবো, আরো দু চারশো বছর পরে এই community-র মধ্যে আরো কি কি ভয়ঙ্কর সমস্যা আসতে পারে ! এদের অন্তর্জগতের হয়তো পরিবর্তন ঘটবে না কিন্তু শারীরিক ও ব্যবহারিক নানান পরিবর্তন ঘটতেই পারে।
এখন কথা হোচ্ছে এই ধরণের অসুবিধা সৃষ্টি হোলে তা দূর করার জন্য remedy কি হবে ? Remedy একটাই_ ওই দুটো অর্থাৎ Food habit and Life style পাল্টে পুনরায় পূর্বের জীবনধারায় ফিরে আসতে হবে ! তাহলেই সমস্ত দুরারোগ্য ব্যাধির প্রবণতা এমনকি genetic disorder–ইত্যাদি গুলোও চলে যাবে । ক্যান্সার, এইডস, কুষ্ঠ, যৌনরোগ, শ্বেতী ইত্যাদি রোগগুলিকে বলা হয়_ degenarative disease ! Degenarative disease–অর্থে সেইসব রোগ, যেগুলিকে শরীর আর re-genarate করতে পারছেনা ! আমরা এগুলোকে বলি__ মহাপ্রকৃতি আর সেই শরীরকে তেমন পছন্দ করছে না, কারণ এমন কিছু প্রকৃতিবিরুদ্ধ কাজ সেই শরীরের দ্বারা বা সেই বংশপরম্পরায় হয়ে গেছে যে, প্রকৃতি সেই ব্যক্তিটিকে বা সেই বংশের সকলকে withdraw করে নিতে চাইছে ! এই অবস্থায় ঐ সব বংশে রোগগ্রস্ত সন্তান অথবা কন্যা-সন্তান জন্মাতে থাকে –যাতে করে ঐ সব বংশের আর কোনো শাখা -প্রশাখা না থাকে। মেয়েদের বিবাহ হয়ে গেলে__ তারা পর গোত্র হয়ে যায়, তার সন্তানাদি হোলে সেটা অন বংশ-পরম্পরা !
তবে, এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম রয়েছে__ যদি আবার সেই বংশের ধারায় এমন কোনো ব্যক্তি এসে যায়__যে তার Food habit and Life style-এর সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে, অন্তত 12 বছর সহজ জীবনযাপন করে এবং তার শরীরের ব্যাধির জন্য, auto-urine-therapy, homeopathy, ayurvedic বা naturopathy ইত্যাদি চিকিৎসা করে, আর সাথে সাথে যোগাসন, প্রাণায়াম এগুলি অভ্যাস করে__ তাহলে ওই ব্যক্তির শরীরে সৃষ্ট বংশানুক্রমিকভাবে পাওয়া degenarative disease-এর মতো মারাত্মক ব্যাধিও সেরে যেতে পারে ! আর শুধু দুটো-একটা রোগ সারা-ই নয়, তাদের degenarative disease এমনভাবে সেরে যাবে যে, পরবর্তী generation-এর সদস্যদের উপরেও আর ওইসব রোগব্যাধির কোনো প্রভাব পড়বে না ! সেইসব শিশুরা সুস্থসবল শরীর নিয়েই জন্মাবে এবং তারা সকলেই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবে ! অর্থাৎ মহাপ্রকৃতি যে বংশকে আর রাখতেই চাইছিল না(যেহেতু ঐ বংশের করতে নানারকম বিষ ঢুকে গেছিল), সেই রকম একটা ক্ষয়িষ্ণু বংশ‌ও পুনরায় রক্ষা পেয়ে যেতে পারে ! … (ক্রমশঃ)