স্থান:– এক ভক্তের বাড়ি। সময়:–১৯৯১.
উপস্থিত ব্যক্তিগণ:–গঙ্গাবাবু, রমেনবাবু, মানিকবাবু, দীপ্তিবৌদি, জহর ঘোষ, ধীরুভাই প্রমূখ।।
জিজ্ঞাসু:—রাঢ় বাংলার গ্রাম-গঞ্জে আগেকার দিনে অনেকরকম গ্রামীণ রীতি-রেওয়াজ ছিল ! বাড়ির মেয়েরা বিয়ের অনুষ্ঠানে তো জামাইকে নানারকম ভাবে নাস্তানাবুদ করতোই, এমনকি বিয়ে হয়ে যাবার পরেও নতুন জামাই বাড়িতে এলে, বাড়ির অল্পবয়সী মেয়েরা, তাকে নিয়ে নানারকম মজা করতো এবং বাড়ির বয়স্করাও সেগুলোকে প্রশ্রয় দিতো। এতে অনেকসময় বিপদ‌ও ঘটতো ? গুরু মহারাজ:—ঠিকই বলেছো ! তবে, ওগুলো তো মজা করা নয়, রীতিমতো প্রাণান্তকর অবস্থা হোতো জামাই বাবাজির ! এইজন্য তখনকার দিনে জামাইরা প্রথম দিকে একা একা শ্বশুর বাড়ি আসতেই চাইতো না, বন্ধু-বান্ধব বা কোনো বয়স্ক আত্মীয়-স্বজনকে সঙ্গে নিয়ে আসতো ! আসলে নতুন জামাইকে একটু নাজেহাল করে বাড়ির ছোট-বড় সব বয়সের মেয়েরাই একটু মজা পেতো_ এই আর কি ! তবে, এই ব্যপারটা মাঝে মাঝে অত্যাচারের এমন একটা পর্যায়ে চলে যেতো যে, জামাই বাবাজির প্রাণ সংকটকাল উপস্থিত হবার যোগাড় হোতো ! আমার ছোটবেলায় দেখা এমন একটা ঘটনা বলছি শোনো! বাড়িতে নতুন জামাই এসেছে ! শাশুড়ি-মাতা নানাবিধ খাবার-দাবার তৈরি করে বেশ করে জামাইকে খাইয়েছে ! খাবার শেষে নতুন জামাই গেছে তার বিশ্রামকক্ষেবিশ্রাম নিতে ! এবার শ্যালিকার দল গেল নতুন জামাইকে পান খাওয়াতে ! কিন্তু ওরা করেছে কি গোটাকয়েক ‘জামালগোটা’ বা ভেরেন্ডা-র বীজ, খুব ভালো করে বেঁটে পানের মশলার সাথে মিশিয়ে জামাইয়ের জন্য পান সেজে নিয়ে গেছিলো । আর নতুন জামাই সরল বিশ্বাসে শ্যালিকাদের সাথে গল্প করতে করতে সেই পান খেয়েও নিয়েছিল । কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই তো action শুরু হয়ে গিয়েছিল ! আসলে জামালগোটার বীজ হোলো ‘জোলাপে’-র মূল উপাদান ! এর কাজ‌ই হোল পেটটাকে একদম wash করে দেওয়া ! জামালগোটা পেটে যাবার কিছুক্ষণ পর থেকেই পেটে এমন মোচড় মারবে যে, স্থান-কাল-পাত্র বিচার না করেই পায়খানায় ছুটতে হবে ! এক্ষেত্রেও ঘটনাটা তাই ঘটেছিল ! তখনকার দিনে গ্রামাঞ্চলের গৃহস্থবাড়িতে পায়খানা ঘর থাকতো না ! পাশেই কোনো পুকুর পাড়ে ওই কর্মটি সারতে হোতো ! ফলে জামাইবাবাজিকেও গাড়ু(তখনকার দিনে পায়খানা যাবার সময় লোকে গাড়ু-ই ব্যবহার কোরতো) হাতে বারকয়েক পুকুরধারে ছোটাছুটি করতেই হোলো ! কিন্তু এর ফলে জামাইবাবাজি এতো দুর্বল হয়ে পড়লো যে, শেষের দিকে তার আর বাড়ির বাইরে যাবার মত অবস্থাই ছিল না ! এবার বাড়িতেই একটু আড়াল করে দেওয়া হোলো । সে এক নিদারুণ লজ্জাস্কর অবস্থা ! এদিকে অতোবার পায়খানা করার পর জামাই বাবাজি এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছিল যে, তার তখন প্রাণ যায় যায় অবস্থা ! বড়রা জামাইয়ের শুশ্রুষার কাজে লেগে গেল, বাড়ির সকলেই খুবই চিন্তায় পড়ে গেল ! কেউ কেউ ডাক্তার কবিরাজের খোঁজেও বেরিয়ে গেল । এদিকে যারা এই কাজটি করেছিল অর্থাৎ বাড়ির ছোটো ছোটো শ্যালিকারা তারা তো ভয়েই অস্থির ! কিন্তু এখানে একটা কথা জেনে রাখা দরকার যে, ‘জামালগোটা’ প্রাণঘাতী কোনো বস্তু নয় । তবে, ব্যক্তিটি(যার উপর প্রয়োগ করা হয়েছে) দুর্বল হোলে এবং জামালগোটা বীজের পরিমাণ অনেকটা বেশি হয়ে গেলে_ এত বেশি বার পায়খানা হয় যে, দুর্বলতাজনিত কারণে অনেক সময় ঐ ব্যক্তির মৃত্যুও হোতে পারে ! তবে পরিমিত পরিমাণে ব্যবহার করলে জামাই বাবাজির খারাপের থেকে ভালোই হয় ! কারণ stomach-টা wash হয়ে যাওয়ায়, শ্বশুরবাড়িতে পরবর্তী দিনগুলোতে ভালোমন্দ খাওয়া-দাওয়া করায় আর কোনো অসুবিধা হয় না।৷