স্থান:– আজিমগঞ্জ কনশাস্ স্পিরিচুয়াল সেন্টার। সময়:–31-শে ডিসেম্বর 1998, 2-রা জানুয়ারি থেকে 6-ই জানুয়ারি 1999.
উপস্থিত ব্যক্তিগণ:–মাণিক ব্রহ্ম, দেবাশীষ, সৌমেন, মিতা প্রমুখ আজিমগঞ্জের ভক্তগণ।।
জিজ্ঞাসু :— মহারাজ! , আপনিই তো সদ্গুরু ?
গুরু মহারাজ:— না_না! এই রূপ কোনো বিশেষণ আমার উপর আরোপ কোরোনা! আমার মুখের সামনে এই সব কথা বলে তুমি কি নিজেকে জ্ঞানী প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছো না কি? দ্যাখো,তোমার মতো আমাকে অনেকেই ‘ভগবান’ বা ‘অবতার’– এইসব বলে বসে! তাদেরকেও আমি এই কথাই বলি । আমি জানি__যারা এই ধরণের কথা বলে__তারা বোধের জগত থেকে বলে না, কিছু বলতে হয় তাই বলে অথবা আমার মন রাখার জন্য ঐসব কথা বলে!
যে আমাকে ভগবান ভাবছে__ সে কি জগতের সকলকেই ‘ভগবান’ ভাবতে পারছে ? তা যদি ভাবতে পারে_ তাহলে তার ভাবনা সঠিক! অন্যথায় এগুলি শুধু কথার কথা ! তবে তোমরা, যারা আমার সন্তান__তোমরা যখন সরাসরি আমার কাছে এসে কোনো কথা বলে বসো বা শ্রদ্ধাপূর্ণ জিজ্ঞাসার দ্বারা জানতে চাও__ তখন আমার একটু মুশকিল হয়। কারণ তোমরা আমার আপনজন__ তাই তোমাদের কাছে__ আমার নিজের জীবনের একান্ত কিছু সাধন-সংক্রান্ত কথা বলতে হয় বা অস্বস্তিকর এমন অনেক জিজ্ঞাসার উত্তর দিতে হয়__ যেগুলো হয়তো অন্যান্য মহাপুরুষগণ বলতেন না বা বলতে পারতেন না । প্রকৃতপক্ষে তাঁরা বলতে পারেন নি, কারণ তাঁদের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল( divine নিষেধাজ্ঞা)। আর আমি যখন জগতের কল্যাণে কাজ করার নির্দেশ পেলাম, তখন আমি মা জগদম্বার কাছ থেকে অনুমতি আদায় করে নিয়েছিলাম_ যাতে উনি ‘সত্য’ উদঘাটন করার জন্য আমার মুখ চেপে না ধরেন(যেমনটা ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণকে করা হতো!)! এইজন্যই অর্থাৎ আমার অধিকার আছে বলেই__ আমি তোমাদেরকে খোলাখুলি অনেক কথা বলতে পারি!
দ্যাখো, আমি কিন্তু সদ্গুরু নই_ আমার সঙ্গে এসেছে এমন অনেকে রয়েছে যারা সদ্গুরু ! সদ্গুরু অর্থাৎ যিনি নিজে সত্যে প্রতিষ্ঠিত হয়ে রয়েছেন এবং যিনি অপরকেও অর্থাৎ তার শিষ্যদেরকেও সত্যের সন্ধান দিতে পারেন, হাত ধরে শিষ্যদেরকে নিয়ে গিয়ে সত্যের কাছাকাছি পৌঁছে দিতে পারেন। পরশমণির স্পর্শে যেমন লোহা সোনায় পরিণত হয়ে যায়, ঠিক তেমনি প্রকৃত সদ্গুরুর সংস্পর্শে কিছুকাল কাটালেই মানুষের জীবন আধ্যাত্মিকতার আলোয়,উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে।
তবে, এখানে একটা কথা খেয়াল রাখতে হবে যে, যেকোনো বস্তু কিন্তু সোনা হয় না_ লৌহ জাতীয় কিছু কিছু বস্তুই সোনায় পরিণত হোতে পারে । তেমনি এখানেও সাধন ভজনকারী ব্যক্তির মধ্যেই সদ্গরুর প্রভাব ক্রিয়াশীল হয়ে থাকে এবং তার মধ্যেই আধ্যাত্মিক উন্নতি পরিলক্ষিত হোতে পারে ।
মহামানব যীশু একটা গল্পের আকারে এই ব্যাপারটা বুঝিয়েছিলেন যে, উন্নত ফসলের বীজও যদি পাথুরে জায়গায় বপন করা হয়, তাহলে হয় তা পাখি বা অন্যান্য প্রাণী খেয়ে নেয় অথবা বীজগুলি রৌদ্রে শুকিয়ে যায় । কিন্তু সেই বীজই যদি কোনো কর্ষিত উর্বরা জমিতে বপন করা হয়, তাহলে ঐ বীজ থেকে বলিষ্ঠ সতেজ চারা বের হয় এবং সেই চারা থেকে সুন্দর ফসল(ফুল বা ফল)ফলে। সুতরাং মনুষ্য শরীর গ্রহণ করলেই কি এখনো সকলকে ‘মানুষ’ বলা যায় ? আবার ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের কথাই বলতে হয়__যার মান এবং হুঁশ আছে_ সেই ব্যক্তিই ঠিকঠিক মানুষ ! আরো সরলভাবে বলতে গেলে__ যার মধ্যে আত্মসম্মানবোধ(শ্রদ্ধা বোধ) প্রতিষ্ঠা হয়েছে এবং যার বিবেক জাগ্রত হয়েছে__ সেই ব্যক্তিই মানুষ পদবাচ্য__অন্যেরা নয়। এই ধরণের মানুষেরা যদি মহাপুরুষের(সদ্গুরুর)সান্নিধ্য পায় এবং তাদের যদি প্রচেষ্টা থাকে__ তাহলে অবশ্যই সেই সকল ব্যক্তির আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধিত হবে, এ বিষয়ে কোনো সংশয় নাই।।