শ্রী শ্রী গুরুমহারাজের সাথে ভক্তদের ‘সুন্দরবন’ ভ্রমণের ঘটনাসমূহ নিয়ে এখানে এখন আলোচনা করা হচ্ছিলো। এই প্রসঙ্গেই কথা উঠেছিল সিঙ্গুর তত্ত্বমসি যোগাশ্রমে-র ! সেই সময় (আশ্রম শুরুর প্রথমদিকে অর্থাৎ ১৯৯০-সালের আগে-পিছে) ওই আশ্রমের নতুন রূপদান এবং বিকাশের প্রয়োজনে ওখানকার ভক্তরা শুধু ভক্তদের collection-এর উপর নির্ভর করে না থেকে, নিজেরা স্বনির্ভর হয়ে ওঠার নানারকম চেষ্টা করতো ৷ এই ব্যাপারে সবচাইতে সচেষ্ট ছিল ওখানকার young brigade, যাদের কথা পূর্বেই বলা হয়েছে ৷ আর গুরুমহারাজ তো ছিলেন চিরচঞ্চল, চিরউচ্ছ্বল, চিরউদ্দাম, চিরযৌবনোদ্দম একজন মানুষরূপী স্বয়ং ভগবান ৷ তাই যেখানেই উদ্যম, যেখানেই যৌবনের উচ্ছ্বলতা-উৎসাহ-উদ্দীপনার জোয়ার, অ্যাডভেঞ্চার, নতুন কিছু করার অন্বেষণ – সেখানে উনি সাথে থাকবেনই – উৎসাহ যোগাবেনই (অবশ্য উনি সবসময় সবার সাথে, সবার পাশেই থাকেন ৷) !
তাই সিঙ্গুরের ওই young brigade-এর যখনই নতুন কিছু পরিকল্পনা মাথায় আসতো, ওরা প্রথমে গুরুমহারাজকেই বলতো ৷ আর গুরুমহারাজ মনোযোগ সহকারে ওদের সমস্ত কথা শুনতেন, সব কথার মান্যতা দিতেন এবং হইচই করে নতুন project-টি আরো কিভাবে ভালো হতে পারে_ তার tips-ও দিয়ে দিতেন ! কি সাংঘাতিক মানুষ (ভগবান) ছিলেন ওই স্বামী পরমানন্দ ! উনি সবই জানতেন – উনি জানতেন project-গুলির ভবিষ্যৎ কি ! তবুও তিনি কেমন অনায়াস ভঙ্গিতে সবার সব পরামর্শ শুনতেন এবং project-গুলির উন্নতির tips-ও দিতেন ! একটা একটা project fail হোতো, সিঙ্গুর আশ্রমের ছেলেরা আবার নতুন কোনো project নিয়ে গুরু মহারাজের কাছে আসতো__গুরু মহারাজ সেটাতেই উৎসাহ যুগিয়ে ওদের ফেরৎ পাঠাতেন।।
সেইরকমই একটা উল্লেখযোগ্য project সিঙ্গুরের young brigade নিয়েছিল, আর সেটা হোলো Tour programme করা। এটার বিশেষত্ব ছিল এই যে, এর মাধ্যমে গুরুভ্রাতা-ভগ্নীসহ বনগ্রাম আশ্রমের ব্রহ্মচারী-ব্রহ্মচারিণীদেরকে সাথে নিয়ে ভারতবর্ষের বিভিন্ন তীর্থস্থান ও দর্শনীয়স্থান দর্শন করাও হোতো, আবার এখান থেকে যা লভ্যাংশ হোতো_সেটাকে আশ্রমের উন্নতিকল্পে বা আশ্রমের অন্যান্য কাজে লাগানো হোতো ৷ এইরকমই বেশ কিছু Tour programme সিঙ্গুর আশ্রম থেকে করা হয়েছিল (আজিমগঞ্জ কনসাস স্পিরিচুয়াল থেকেও রেলগাড়ির কোচ্ বুক্ করে Tour programme করা হোতো৷) ৷ তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় এটাই যে, সিঙ্গুর আশ্রম দ্বারা পরিচালিত এই programme-এ গুরুমহারাজ স্বয়ং সমগ্র দলের সাথে দু-বার সঙ্গ দিয়েছিলেন। এর মধ্যে একবার পুরী-বিষ্ণুপুর- জয়রামবাটী-কামারপুকুর programme এবং অপরটি সুন্দরবন যাত্রা!
১৯৯২ সালের ১২ ই জুন এই সুন্দরবন যাত্রার শুভসূচনা হয়েছিল এবং ওনারা ফিরেছিলেন ১৭ তারিখে, অর্থাৎ Tour programme-টি ছিল মোট ছয় দিনের ৷ সিঙ্গুর আশ্রম থেকে আয়োজকেরা দুটি বাসে করে প্রায় ১২০ জনের মতো ভক্তদেরকে নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল ৷ প্রায় সারাদিনের বাসযাত্রার শেষে ওনারা সকলে পৌঁছেছিলেন নামখানায় ৷ সেখানে দুটি লঞ্চ ওই পাঁচদিনের জন্য book করা ছিল – একটি বড় লঞ্চ এবং একটি ছোট লঞ্চ ! গুরুমহারাজ এবং তপিমা কোলকাতায় ছিলেন, ওনারা সেদিন সরাসরি by car নামখানায় পৌঁছেছিলেন এবং ওদের সাথে join করেছিলেন ৷
এরপর শুরু হয়েছিল ভগবানের সাথে ভক্তদের লঞ্চে করে সুন্দরবন অর্থাৎ সুন্দরবনের দৃশ্য উপভোগ এবং কয়েকটি দ্বীপে অবতরণ ও সেখানকার খুঁটিনাটি দেখা ৷ কিন্তু প্রথম দিনেই একটা সমস্যা দেখা দিয়েছিল এই যে, সকলেই চায় গুরুজী যে লঞ্চে রয়েছেন – সেই লঞ্চেই উঠতে ! গুরুমহারাজ স্বয়ং অন্তর্যামী, উনি কি আর এটা বোঝেন না – উনি এখানে ওখানে সবার সাথে একটু সময় দিয়েই চলে গেলেন যেখানে রাধুনীরা রান্না করছে – সেখানে ! ওখানে পৌঁছেই উনি সবার সাথে মিলেমিশে রান্নার কাজে যারা নিযুক্ত ছিলো_উনি তাদের কিছুক্ষণ সঙ্গ দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ভক্তেরা এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে গুরুজী বলেছিলেন যে, দুটি লঞ্চের সমস্ত ভক্তরাই চাইছিল যে উনি যেন তাদের কাছাকাছি থাকেন – কিন্তু সেটা তো আর সম্ভব নয় ৷ আর তাছাড়া যারা রান্নার দায়িত্বে ছিল (কয়েকজন ভাড়া করা রাঁধুনি ছিল কিন্তু রান্না-খাওয়া দেখভালের দায়িত্বে যারা ছিল, তারা তো ছিল গুরুজীর ভক্ত।), তারা তো কোনসময়েই গুরুজীর সঙ্গ পাবে না – তাই উনি ওদেরকে কিছুটা হোলেও সঙ্গ দিতে চেয়েছিলেন ৷৷
এই হোলো ভগবানের মীমাংসা ! এই হোলো ভগবান স্বামী পরমানন্দের ভক্তদের প্রতি সমদর্শন ভাব ! অনন্ত করুণাময় ভগবানের মহিমা কে-ই বা বর্ণনা করতে পারে ! যতই বলা যাক – সেটাই যেন অতি ক্ষুদ্র, অতি তুচ্ছ, অতি নগণ্য হয়ে যায় ! ভগবান স্বয়ং আরো কত মহান, কত বিরাট, কত মহিমাময়, কত করুণাময় – তার সবটা কে বলবে? সত্যিই তো ব্যাস-বাল্মিকীর ন্যায় ঋষিরা যাঁর মহিমা বর্ণনা করতে পারেনি – ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র একজন সাধারণ মানবের পক্ষে তা কি কখনো সম্ভব হোতে পারে! তাই সেই চেষ্টাটাও আমরা করবো না। আমরা শুধুমাত্র সেই মহিমময় ভগবানের লীলার কথাই বর্ণনা করবো ৷৷[বাকি অংশ ক্রমান্বয়ে পরিবেশিত হবে।]