জিজ্ঞাসু : আপনাদের যাত্রাপথে আর কোন মহাত্মার সাথে দেখা হয়নি ?

গুরুমহারাজ : হয়নি আবার । কতশত মহাত্মা যে হিমালয়ে রয়েছেন–কে তাঁদের খবর রাখে! কেউ কেউ কয়েক হাজার বছর একই শরীরে রয়েছেন, কেউ আবার একাধিক শরীর পরিবর্তন করেছেন কায়াকল্প করে। এছাড়া অণিমা, লঘিমা ইত্যাদি সিদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে কেউ কেউ অণুবৎ হয়ে, কেউ কেউ লঘু শরীরে অবস্থান করছেন।

অনুভব ক্ষমতা ও বোধ না থাকলে তুমি তাঁদের অবস্থান টেরও পাবে না। এমনও অনেক দেখেছি—যেখানে হয়তো হাজার হাজার উন্নত যোগীরা রয়েছেন—সেখানে এখনও শিক্ষা চলছে – আচার্যগণ অপেক্ষাকৃত নবীনদের নানারকম যোগ এবং আধ্যাত্মিক শিক্ষা দিচ্ছেন। বাইরে থেকে এঁদের অস্তিত্বই কেউ কোনদিন টের পাবে না। এঁদের কথা পরে কোন সময় বলব, আগে একজন মহাত্মার কথা বলছি- শোন, যিনি ত্রাটকের সাহায্যে গুহার অভ্যন্তর থেকে পর্বতের নীচে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আমাকে দেখতে পেয়ে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন । দ্যাখো তোমাদের বিজ্ঞান fail হয়ে যাবে এই ঘটনার কাছে কারণ সাধারণত মানুষের দৃষ্টি আলোকরশ্মির উপর নির্ভর করে। কোন বস্তু থেকে আলো চোখে পড়লে বস্তুটি দৃশ্যমান হয় আর আলো যেহেতু সলররেখায় চলে সুতরাং দৃষ্টিও সরাসরি বা সরলরেখা বরাবর হয়ে থাকে। কিন্তু দৃষ্টিপথে কোন বাধা এসে গেলে বস্তুটি থেকে আলো এঁকে বেঁকে আসতেও পারে না, ফলে বস্তুটি আর দৃষ্টিগোচর হয় না। কিন্তু ত্রাটক বিদ্যায় সিদ্ধ হলে আঁকাবাঁকা পথেও দৃষ্টি নিক্ষেপ করা যায়। ঐ মহাত্মা আমার ক্ষেত্রে সেটাই করে দেখালেন।

ঘটনাটা হয়েছিল কি, নাগা সাধুদের সাথে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ কোন একদিন ওনাদের আর দেখতে পেলাম না। ফলে এখানে- ওখানে ওনাদের সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছি কিন্তু কোথাও পাচ্ছিনা তো বটেই, উপরন্তু দেখছি কি ২২/৩ মাস ধরে ঘুরে ঘুরে বারবার একই জায়গায় পৌঁছাচ্ছি। জায়গাটা পর্বতের ঢালে অবস্থিত ফলে জঙ্গলাকীর্ণ, সূর্যের ডোবা-ওঠা দেখে সময়ের আন্দাজ করতাম তখন। এইভাবে কয়েকবার যখন ঐ রকম ঘটনা ঘটল, তখন শেষবারে সিদ্ধান্ত নিলাম যে, এই স্থানটিতে যখন বারবার ফিরে আসছি তখন আর কোন চেষ্টা নয়—শরীরটা এখানেই পাত হয়ে যাক্। এই ভেবে একটা পাথরের উপর শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছি। হঠাৎ মেঘ-গর্জনের মতো আওয়াজ ভেসে আসতে লাগল—চমকে উঠে এদিক-ওদিক তাকিয়ে কিছুই দেখতে পেলাম না, কিন্তু স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি, কেউ যেন বজ্রনির্ঘোষে আমাকে ডাকছে এবং উপরে উঠে আসতে বলছে। যাইহোক যখনই আওয়াজটা আসছিল তখনই আমাকে কানে হাত দিয়ে চাপা দিতে হচ্ছিল, কারণ মনে হচ্ছিল ঐ আওয়াজে বোধ হয় আমার কানের পর্দা ফেটে যাবে।