জিজ্ঞাসু : গুরুমহারাজ ! হিমালয়েই ঘটতে পারে, অন্যকোথাও নয় –এমন দু-একটা ঘটনা বলুন, যেগুলোর সত্যিই বুদ্ধিতে ব্যাখ্যা মেলেনা!

গুরুমহারাজ : ঠিক আছে এমন দুটো ঘটনা বলছি, একটা আমার নিজের দেখা আর একটা আমার গুরুদেব রামানন্দ অবধূতের চোখে দেখা ঘটনা, যা তিনি পরে আমাকে বলেছিলেন।

গাড়োয়াল অঞ্চলে ঘোরার সময় একটি লোকের সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছিল যার বয়স ২০০ না ২৫০ বছর তা সে নিজেও ঠিক বলতে পারল না। লোকটি ক্ষেতে একটি যুবকের ন্যায় কাজ করছিল। লোকটির প্রথমপক্ষের স্ত্রীর সন্তান শুধু নয়, নাতি-নাতনীরাও বৃদ্ধ হয়ে কবে মারা গেছে, কিন্তু তার শরীরের কোন পরিবর্তনই হয়নি। লোকটি ছোটবেলা থেকে যোগী নয়—সংসারী ছিল, ফলে আহার- বিহারের কোন সংযম ছাড়াই কিভাবে এত আয়ু লাভ হ’ল, তা জিজ্ঞাসা করতেই সে বলছি।

সে এক অদ্ভুত গল্প শোনাল সেটাই তোমাদের
লোকটি যখন কিশোর ছিল, তখন একদিন পিতার সঙ্গে সে ক্ষেতে কাজ করছিল। পাহাড়ি এলাকার ক্ষেত, ফলে জমিতে প্রতিবছর পাথর পরিষ্কার করতে হয়। এই রকম পাথর সরাতে সরাতে ক্লান্ত হয়ে ও একটা পাথরের উপর বসে বিশ্রাম নিচ্ছে—এমন সময় পাথরটির ফাঁক থেকে এক বিষাক্ত সাপ তার পায়ে দংশন করে। সাপটির এমনই বিষ যে, সময় না দিয়েই ছেলেটি সঙ্গে সঙ্গে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে এবং স্থানীয় ওঝা—গুণিন এসে ছেলেটিকে মৃত বলে ঘে বলে ঘোষণা করে দেয়।
এ রকম অবস্থায় ছেলেটির বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন সবাই মৃত দেহটি ঘিরে যখন কান্নাকাটি করছে, এমন সময় একজন প্রবীণ সন্ন্যাসী ঐ দিক দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি কৌতূহলী হয়ে ব্যাপারটা কি দেখার জন্য কাছে আসতেই শোকাচ্ছন্না জননী সন্ন্যাসীর পায়ে আছড়ে পড়ে কাতর অনুরোধ জানায় ছেলেটির প্রাণ বাঁচানোর জন্য। সৌভাগ্যক্রমে সাধুটির ঐসব বিদ্যা জানা ছিল, তিনি ভাল করে ছেলেটিকে পরীক্ষা করে দেখলেন, ছেলেটি গভীর ‘কোমায়’ আচ্ছন্ন রয়েছে কিন্তু তখনও মরেনি। তিনি নানারকম test করে বললেন, ‘ছেলেটি খুব সৌভাগ্যবান—এর শরীর যেন নষ্ট না হয়।’ গ্রামের লোকেরা একথা শুনে অবাক, বলল, ‘কি বলছেন মহারাজ । যে ছেলেটি মারা গেছে, সে আবার সৌভাগ্যবান কি করে হবে ?’ সন্ন্যাসী বললেন, ‘ছেলেটি মরেনি, ওকে কালনাগিনী জাতীয় এমন সাপে কেটেছে যে, ঐ বিষ শরীরে হজম হয়ে গেলে ঐ শরীরটার ক্ষয় হবে না, বহুকাল ওর শরীরটা থেকে যাবে, অর্থাৎ ছেলেটি বহুকাল বেঁচে থাকবে।’ এই বলে ছেলেটির মাথায় কিছু ঔষধির পটি বেঁধে দিলেন এবং বিধান দিলেন যে, ছেলেটির দেহকে যেন একটা গোবর গোলা চৌবাচ্চার মধ্যে ডুবিয়ে রেখে দেওয়া হয়। তারপর ছেলেটির যতক্ষণ না শরীরে চেতনা আসে ততক্ষণ শরীরটাকে ঐ অবস্থায় রেখে পাহারা দেবার ব্যবস্থা করে তিনি চলে যান।

এরপর প্রায় ৭ দিন অচৈতন্য থাকার পর ছেলেটির জ্ঞান ফিরে আসে এবং সে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়। তারপর তো এই ইতিহাস। আমার সঙ্গে যখন দেখা হল লোকটি তখনও যুবকের মতোই খেতে ও খাটতে পারে, তাহলেই বুঝতে পারছ—এ ঘটনাটার কি ব্যাখ্যা দেবে ?