জিজ্ঞাসু : বিভিন্ন ধর্মে বা ধর্মের বিভিন্ন প্রতীক বোঝাতে সাপকে খুবই গুরুত্ব দেওয়া হয়, এমনও শোনা যায় যে, বিভিন্ন যোগী নাকি সাপশরীরে অবস্থান করেন—এগুলির কারণ কি ?
গুরুমহারাজ : তুমি স্বামী বিবেকানন্দ প্রতিষ্ঠিত বেলুড় মঠে বা উদ্বোধন পত্রিকায় যে একটা প্রতীক দেখেছো—ওটার কথা বলছ কি ? যাইহোক তুমি ঠিকই বলেছ, তবে বিভিন্ন ধর্মে নয়, বিভিন্ন ধর্মমতে সাপকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। ওটার প্রধানত দুটি কারণ একটা হল সাপ গতির প্রতীক। সাপের আঁকাবাঁকা সর্পিলগতি, এটাকে যেমন কেউ কেউ কুটিল গতি বলেছে, তেমনি পদার্থবিজ্ঞানে এটাকেই গতির রূপ হিসাবে দেখানো হয়েছে। যে কোন গতি বোঝাতেই graphi cally তুমি ঐ চিত্রটাই পাবে। এইজন্যই সাধক বা যে কোন ব্যক্তির জীবনে সুখ-দুঃখ, উত্থান-পতন, ভালো সময়, খারাপ সময় আসবে। বিচারের দ্বারা বুঝতে হয় যে, জীবন গতিশীল কারণ গতির ধর্মই হচ্ছে একবার উপরে, একবার নীচে অথবা একবার ডাইনে, একবার বামে ধাবিত হওয়া। সুতরাং মাভৈ, তুমি গতিশীল, তোমার আবার ভাবনা কি ? আর যে থেমে গেছে, তার ঘটেছে মৃত্যু। কেননা সে একটা ভাবনায় অথবা কোন একটা বদ্ধ ধারণায় আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। আবার কোন মহাপুরুষ পিছনে ‘ঘা’ না লাগানো পর্যন্ত সে ঐখানেই ঘুরতে থাকবে।
সাধকের জীবনে আদ্যাশক্তিরূপিণী কুলকুণ্ডলিনী সর্পিলাকারে জড়িয়ে জড়িয়ে নিদ্রিত থাকে। সাধনার দ্বারা তাকে জাগ্রত করতে পারলে এবং তার মধ্যে গতির সঞ্চার করতে পারলে সাধক চরৈবেতির সোপান ধরে এগিয়ে চলে পূর্ণত্বের দিকে। শাস্ত্রকারেরা ঐ কুলকুণ্ডলিনীকে বোঝাতে সাপের আকারকে নিয়েছেন, স্বামী বিবেকানন্দও তাই করেছেন।
তবে সাপের যে কুটিল গতি এবং তার যে ছিদ্র, গর্ত অথবা ফাটল-খোঁজা স্বভাব এটা সাধারণ মানুষের স্বভাবের সঙ্গে মেলে। মানুষও সহজ-সরল হতে পারে না, নিজেকে জটিল বা কুটিল করে ফেলে আর সদা-সর্বদাই অপরের ছিদ্র বা দোষ খোঁজে। এইটাকে বলতে পারো মনের সরীসৃপ অবস্থা। অর্থাৎ বিবর্তনে শরীরটা মানুষের মতো হলেও মনোজগতে সে এখনও সরীসৃপ রয়ে গেছে, শুধু আঁকাবাঁকা পথে হাঁটছে আর পরের ছিদ্রান্বেষণ করে বেড়াচ্ছে। বিভিন্ন মহাপুরুষের সাপ শরীরধারণের ব্যাপারটারও উত্তর পাবে ঐ দিয়ে বিচার করলে। যে যে রঙের চশমা পরে আছে, সে তো জগতকে ঐ রঙেরই দেখবে। কোন মহাপুরুষের শরীরকে একজন সরীসৃপ দেখছে, মানে সে সেই চেতনায় রয়েছে, উন্নত চেতনার লোক হ’লে, সে চেতনার চক্ষু দিয়ে দিব্যশরীরধারী মহাপুরুষই দেখবে।