জিজ্ঞাসু—অনেকেই বলে মানুষের শিশুকালটাই ভালো— প্রকৃতপক্ষে কি তাই ?

গুরুমহারাজ—না-না তা কখনই নয়। এটা কোন যুক্তিতে বলছ ? পরিবর্তন ও বিবর্তনই তো জগতের ধর্ম। তাই একটা পূর্ণাঙ্গ জীবনে অনেকগুলি দশা বা ধাপ রয়েছে – শৈশব, বাল্য, কৈশোর, যৌবন, প্রৌঢ় ও বার্ধক্য। এর মধ্যে “শৈশব” বা শিশু অবস্থা জীবনের প্রথম দশা—এটা কখনও ভালো হয় ? বেচারা শিশুটা কি অসহায়। সম্পূর্ণভাবে পরের উপর নির্ভরশীল, কেউ ওঠালে তবেই ওঠে, শুইয়ে দিলে তবেই শোয়, নিজে নিজে পাশ ফিরতেও পারে না। আত্মরক্ষার একমাত্র অস্ত্র কান্না। কোন অসুবিধায় পড়লে, যেমন হয়তো পিঁপড়ে কামড়াচ্ছে, পায়খানা বা পেছাপ করে ফেলেছে, খিদে পেয়েছে—এগুলির জন্য সাহায্যের আবেদন করছে কান্নার মাধ্যমে। আর মায়ের গায়ের গন্ধটা খুব চেনে, অন্য কেউ কোলে নিলে কান্না থামছে না কিন্তু মা যেই কোলে নিল অমনি কান্না থেমে গেল।

তোমাদের কি কারও অতি শৈশবের স্মৃতি রয়েছে ?—কিছু কিছু রয়েছে—আমার কিন্তু জ্বলন্তস্মৃতি রয়েছে—জাজ্বল্যমান। আমার শৈশবের প্রতিটি অনুভূতিই আমার মনে আছে। আমার স্পষ্ট মনে আছে প্রতিবেশীদের আদর করা, কোলে নেওয়া আর মায়ের কোল বা মায়ের আদর সম্পূর্ণ আলাদা—তা অতি শৈশবেই আমি বেশ বুঝতে পারতাম। বেশিরভাগ নরনারী বাচ্ছাকে কোলে নিয়ে হয় মুখে মুখ ঘসে বা বিভিন্ন জায়গায় খোঁচা বা কাতুকুতু দিয়ে শিশুকে হাসানোর চেষ্টা করে, এটা কিন্তু যে কোন শিশুর কাছেই অসহ্য। আমার মনে আছে বড়দের শিশুর মুখে বা গালে দাড়িযুক্ত গাল ঘষা কি যন্ত্রণার ! শিশুর কচি চামড়া এত নরম ও sensitive যে, বড়দের দাড়ি, তা সে যতই কামানো হোক, ঘষলেই জ্বালা করে ওঠে। কিন্তু শিশু অসহায়—সে কি- ই বা করতে পারে! এইরকম অবস্থায় পড়লে আমি চিৎকার করে কেঁদে উঠতাম, এমন কাঁদতাম যে, মা বাধ্য হয়ে হাতের কাজ ফেলে আমাকে কোলে নিতে আসত। আর কাতুকুতু বা খোঁচা মেরে যারা হাসাতে চায় তারা কোলে নিলেই আগে থেকেই হাসতে শুরু করে দিতাম, পাছে যদি লোকটা অত্যাচার করে বা খোঁচা মারে। বিভিন্নজনের কোলে নেওয়ার কায়দাও বিভিন্ন, আমি এসব মোটেই সহ্য করতাম না, তাই চিৎকার করে কাঁদতাম। আমার মা বলতো ও খুব কাঁদুনে ছেলে মা, ওকে কোলে নিতে যেওনা। আমি একা একাই ভালো থাকতাম অথবা মায়ের কোলে।

আমার জীবনে প্রথম success, যখন আমি প্রথম নিজে নিজে চেষ্টা করে উপুড় হতে পারলাম। সে যে আমার কি আনন্দ! তারপর যখন বসতে শিখলাম—সেটা ছিল দ্বিতীয় success, আমি নিজে কিছু একটা করেছি বা পেরেছি—এই আনন্দ। সেই অবস্থায় একদিন আমি চৌকি থেকে পড়ে গেলাম। মা ঘরের চৌকিতে ঘুম পাড়িয়ে রেখে বাইরে কিছু কাজ করছেন। হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙে গেল, জেগে দেখি আমি ঘরে একা চৌকির উপর শুয়ে রয়েছি। ধীরে ধীরে অনেক কসরৎ করে চৌকির ধার পর্যন্ত এলাম, মেঝে কতটা নিচু তা আন্দাজ করছি এমন সময় পড়ে গেলাম। সে কি কান্না ! সবাই ছুটে এল –মা কোলে নিয়ে আদর করতে করতেই যন্ত্রণা কমে এল। হ্যাঁ পড়ে গিয়ে দারুণ লেগেছিল, প্রথমটায় অসম্ভব যন্ত্রণা হচ্ছিল, মাথায় গায়ে। মায়ের স্পর্শে ধীরে ধীরে কমে গেল। কিন্তু বেশ মনে পড়ছে অত কান্নার মধ্যেও একটা আনন্দের জোয়ার বইছিল আমার অভ্যন্তরে। কারণ ঐ যে ঐ দিনই প্রথম আমি নিজে নিজে উঠে বসে হামা টেনে চৌকির প্রান্ত পর্যন্ত আসতে পেরেছিলাম।

এরপর আর একটু বড় হতেই যখন হাঁটতে শিখলাম, তখন আর আমাকে পায় কে ? হাঁটা শুরু করার কয়েকদিন পর থেকেই চোঁ চোঁ দৌড়। আমার তখন থেকেই বোধ ছিল যে, জীবন ছোট, সুযোগ পেলেই দৌড়তে হবে, চরম গতিশীল হয়ে লক্ষ্যপূরণ করে সবার আগে আগে বেরিয়ে যেতে হবে। যাইহোক তখন সবে হাঁটতে শিখেছি, সেই সময় এমন একটা ঘটনা ঘটল যে, ঘটনায় আমার বহিঃচেতনা অন্তরচেতনায় লীন হয়ে গেল এবং সেই প্রথম আমার মধ্যে বিরাটত্বের প্রকাশ ঘটে গেল। আমি বুঝতে পারলাম আমি কে এবং কি জন্য এসেছি। আমাদের বাড়ীর চারপাশেই বাঁশবন। চৈত্রমাসে বাঁশবাগানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হোত যাতে আবর্জনা, শুকনো বাঁশপাতা এগুলি পুড়ে যায় আর এতে নাকি বাঁশের quality ভালো হয়। আমার সাথে পাড়ার বড় ছেলেরাও রয়েছে, ছোটরাও রয়েছে, সবাই মিলে পাতা জড়ো করছি, হৈ চৈ করে আনন্দ করছি। তারপর পুরো বাঁশবাগানকে round করে যখন আগুন লাগিয়ে দেওয়া হল, তখন পট্ পট্ করে শব্দ করে সবকিছু পুড়তে লাগল, এতে ছেলেদের আরও আনন্দ। আমিও সবার সাথে দাঁড়িয়ে আছি—হঠাৎ আমি দেখলাম বাঁশবাগানের ভেতর থেকে পাখীগুলো ঝপট্ করে চিৎকার করতে করতে পালাচ্ছে, গিরগিটি-সাপ প্ৰাণভয়ে ছুটে বেরিয়ে পালাচ্ছে, আমার কেমন যেন অস্বস্তি হতে লাগল। তারপর যেই হুহু করে আগুন চারিদিক থেকে ছুটে এসে বাঁশবাগানের ভিতরকার লতাগুল্মকে পোড়াতে লাগল, তখন একটা সমবেত আর্তনাদ আমাকে আঘাত করতে লাগল। ভীত প্রাণীকুল, আর পুড়ে যাওয়া কীট-পতঙ্গের আর্তচিৎকার ও লতা-গুল্মের অব্যক্ত বেদনা যেন আমার মধ্যে প্রবেশ করে যেতে লাগল আর তাদের ঐ সমস্ত বেদনাবোধ আমার মধ্যে হতে লাগল। আমি সহ্য করতে না পেরে সংজ্ঞাহীন হয়ে ওখানেই পড়ে গেলাম। এরপর বড়রা আমাকে কোলে করে বাড়ী নিয়ে গিয়েছিল। এই ব্যাপারে কেউ মন্তব্য করেছিল আগুন দেখে মাথা ঘুরে গেছে, কেউ বলেছিল গ্যাস-অম্বল হয়েছিল কিন্তু প্রকৃত রহস্যটা কেউ জানতে পারেনি।

জিজ্ঞাসু –সাধারণ মানুষের অতীতের সমস্ত স্মৃতি কেন স্মরণ থাকে না, আর বেশীর ভাগ স্মৃতিই তো দুঃখের বা বেদনার ?

গুরুমহারাজ—তৈত্তিরীয় উপনিষদ বলেছে – “আনন্দাদ্ধ্যেব খল্বিমানি ভূতানি জায়ন্তে।/ আনন্দেন জাতানি জীবন্তি। / আনন্দং প্রয়ন্ত্যভিসংবিশন্তীতি।” আনন্দ থেকেই সবকিছু জাত, আনন্দ দ্বারাই সবাই জীবনধারণ করে এবং আনন্দতেই তারা প্রতিগমন ও প্রবেশ করে। তাহলে মানবের জীবনে দুঃখের স্থান কোথায়, বেদনার অবকাশ কই ? মানব নিজ স্বরূপ ভুলেই এই দুর্দশা প্রাপ্ত হয়েছে- আত্মবিস্মৃতিরূপ মহামৃত্যু তাকে গ্রাস করেছে। তাই স্বয়ং সিংহস্বরূপ হয়ে নিজেকে ভেড়া ভেবে ‘ভ্যা”ভ্যা’ করছে। এইখানেই বেদনা ও দুঃখের প্রবেশ। আবার স্ব-স্বরূপের বোধ হলেই শুধু আনন্দ আর আনন্দ। সেই পরম অখণ্ডই বা অদ্বৈতই দ্বৈতসত্তা সৃষ্টি করেন আনন্দের নিমিত্ত বা লীলার নিমিত্ত — পুরুষ ও প্রকৃতি এই দুটি সত্তায় পরিণত হন। তারপর সেই এক ঐ দুইকে আশ্রয় করে বহুরূপে প্রকাশিত হন। এই যে জগৎ-সংসার দেখছ, এটা সেই বহুরূপে প্রকাশিত ব্রহ্মেরই প্রতিভাস। বহু অবস্থাতেই ভেদ আর ভেদ থেকেই দুঃখ, বেদনা, অশান্তি। কিন্তু যখন এই ভেদ দূর হয় তখন ভেদতত্ত্ব অভেদতত্ত্বে লীন হয়। আর তখনই বোধ হয় আনন্দ সর্বদা প্রতিষ্ঠিত।

যোগীর সঞ্চয়ে আনন্দ, আর ভোগীর ক্ষয়ে আনন্দ। যোগী জগৎ থেকে শৈশব, কৈশোর ও যৌবনে যা সংগ্রহ করেন তা সঞ্চয় তো করেনই বরং তাকে আরও বর্ধিত ও purify করে নেন। এইভাবে তিনি ‘চরৈবেতি’র পথ অনুসরণ করে গ্রহণযোগ্য বস্তুকে গ্রহণ ও অবস্তুকে বর্জন করতে করতে এগিয়ে যান। আর ভোগী যৌবনকাল পর্যন্ত জীবন বা জগৎ থেকে যা সংগ্রহ করে, সংসারজীবনে প্রবেশ করেই তার ক্ষয় করতে শুরু করে। নতুন করে আর পুর্বের জমাকে বৃদ্ধি করা তার হয়ে ওঠে না। কেউ কেউ তো অল্পবয়স থেকেই সঞ্চয় অপেক্ষা ক্ষয় বেশী করে ফেলে। ফলে দেখবে প্রৌঢ়ত্বেই শরীরে বার্ধক্যের ছাপ পড়ে গেছে। ষাট বছর বয়সে যোগী যেখানে মাথা উঁচু করে, সোজা মেরুদণ্ড নিয়ে গটগট করে হাঁটেন, দাঁত ও চোখের ক্রিয়াশীলতা বজায় রাখতে পারেন, মস্তিষ্ক বাচ্ছাছেলের মতই fresh ও স্মৃতিশক্তি তাঁদের প্রখর থাকে—অপরপক্ষে অন্যদের তা সম্ভব হয় না। আমজনতাকে ষাট বছর বয়সেই সরকার বাধ্যতামূলক retire করতে বাধ্য করায়। কারণ দেখা গেছে সাধারণত এই বয়সের পর থেকেই মানুষের দৃষ্টিশক্তি কমে, শারীরিক অক্ষমতা আসে, বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ যন্ত্রসমূহ অর্থাৎ heart, lungs, kidney, liver দুর্বল হয়ে যায়। সর্বোপরি মস্তিষ্ক ভালো কাজ করে না ও স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়। এই অবস্থায় জীবনটাই যেন ভার বা বোঝা মনে হয়, আধ্যাত্মিক অগ্রগতির কথা সেখানে কোথায় ! এইভাবে জীবনের প্রথমভাগ অজ্ঞানতায়, মধ্যভাগ ইন্দ্রিয়াদির চাহিদা পুরণের জন্য কর্মশীলতায় আর শেষভাগ হতাশা ও ভোগান্তির মধ্যে অতিবাহিত হয়। তারপর মৃত্যু এবং পরে আবার একটা জন্ম। এইভাবে চক্রাকারে চলেছে জন্ম থেকে জন্মান্তর। তবে সবাই যে একই দলে – তা তো নয়। সমাজে বাস করেও কিছু মানুষ ব্যাপার গুলো খেয়াল রাখে। তারা আর পাঁচটা মানুষের মতো গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেয় না। উজান বাইতে বাইতে কদমতলায় এসে পৌঁছায়, যেখানে বাঁশি হাতে কৃষ্ণের সাক্ষাৎকার হয়। যে কৃষ্ণ সর্বদা বাঁশিতে ফুঁ দিয়ে ডাকছে, “ওরে আয় আয়, আমার কাছে আয়।” কৃষ্ণ অর্থাৎ যিনি শুধু কর্ষণ করেন না –আকর্ষণও করেন।

তাহলে বোঝা গেল যে, জীবনে সঞ্চয় করতে পারলে তবেই “কিছু” লাভ হয়। শুধু অতীতের স্মৃতি কেন, জন্ম- জন্মান্তরের স্মৃতিও জাগরূক থাকে। আর যৌবনের সঞ্চয় যদি শুধু ক্ষয়ই হতে থাকে তাহলে আর তোমার বলতে রইলটা কি ? তাই তুমি যে মেষশাবক নও, তুমিই মৃগেন্দ্র-কেশরী—এই বোধ নিশ্চিত কর। তারপর লেগে পড় সাধনসংগ্রামে। গুরু তোমার সহায়—জয় নিশ্চিত, ‘মাভৈঃ’; চরৈবেতি চরৈবেতি চরৈবেতি।

জিজ্ঞাসু—আপনি আধ্যাত্মিক সুখ-দুঃখের কথা বলেছিলেন কিন্তু আধিদৈবিক ও আধিভৌতিক দুঃখ অর্থাৎ রোগ-ব্যাধি তো এখন আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে ?

গুরুমহারাজ—এর কারণ মানুষ artificial হচ্ছে ; আর সহজতা বা naturality ছেড়ে মানুষ যতই কৃত্রিম হবে বা কৃত্রিমতা অবলম্বন করবে ততই তার ক্লেশ বাড়বে। এখন কথা হচ্ছে আধিদৈবিক —মনের ব্যাধি এবং আধিভৌতিক—দেহের ব্যাধি—এরা কিন্তু পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। বাংলায় একটা কথা আছে, ‘আগে মনে কুষ্ঠ তারপর দেহে কুষ্ঠ।’ কথাটা ঠিক। মনোকুওয়ন থেকেই দেহের কুষ্ঠ হয়। মানুষের মন যত লোভ-মোহাদি রিপুগণের বশীভূত হবে, ততই মন অসুস্থ হবে আর অসুস্থ মনই দেহের ব্যাধিসমূহের একমাত্র কারণ। তবে অবশ্য acute problem গুলোর কথা আলাদা, সেগুলো ব্যাধি হিসাবে গণ্য নয়। যাইহোক বর্তমানে তুমি যে ব্যাধির প্রকোপ বেশী দেখছ, এর কারণ এককথায় কামনা ও বাসনার প্রতি মানুষের অত্যন্ত আকর্ষণ বৃদ্ধিরই ফল।

কিন্তু কথা হচ্ছে, এই যে ত্রিবিধ ক্লেশ, এটা সর্বকালেই মানুষের সমাজে ছিল, এখনও আছে, পরেও থাকবে। তবে কোন কোন সময় এদের কোনটার হয়ত বেশী প্রকাশ ঘটে। মনের ব্যাপারটা বর্তমানদেহবাদীরা মানে না, অবশ্য জানেও না, কিন্তু ব্যাখ্যাটা মানবে। মনকে বলা হয়েছে ইন্দ্রিয়গণের রাজা, আর রিপুসমূহ ইন্দ্রিয়দের অবলম্বন করেই তাদের ক্রিয়া করে থাকে। এবার যে ব্যক্তি যত উচ্ছৃঙ্খল – যত অসংযমী, তার দেহ থেকে তত বেশী thyroxine নিঃসৃত হয়, কারণ তার ইন্দ্রিয়-সমূহ সহজতা হারিয়ে অকারণ বেশীমাত্রায় ক্রিয়াশীল হয়। আবার বেশীমাত্রায় thyroxine নিঃসরণই মানুষের immunity power কমার অন্যতম কারণ। ফলে এটা সহজেই বোঝা যাচ্ছে যে, মানুষের শরীরকে ব্যাধিমুক্ত করতে হলে তাকে অযথা thyroxine নিঃসরণ কমাতে হবে অর্থাৎ সংযমী ও সুশৃঙ্খল হতে হবে। এটা আবার সম্ভব তখনই যখন মন সুস্থ ও সুন্দর হবে। এখন পুনরায় জিজ্ঞাসা আসবে—মন কি কৌশলে শান্ত হয় ? তার উত্তর—মন শান্ত হবে প্রাণ স্থির হলে। বেদান্তে তাই প্রাণ-বিদ্যাকে অত্যন্ত মর্যাদা দেওয়া হয়েছে, প্রাণায়ামের সাহায্যে প্রাণকে স্থির করার কৌশল গুরুর কাছে শিখে নিতে হয়। এরপর এইসব শিক্ষা জীবনে আচরণ করতে শুরু করলেই ধীরে ধীরে সুফল পাওয়া যায়।

জিজ্ঞাসু – –এ ব্যাপারে যদি আর একটু detail বলেন তো ভালো হয় ?

গুরুমহারাজ—দ্যাখো, শাস্ত্রে আছে ঔষধি, রসায়ন ও প্রাণায়াম। এই ত্রিবিধের প্রয়োগে মানবশরীরের রোগ নিরাময় হয়। ঔষধি বলতে ভেষজ এবং জান্তব অর্থাৎ গাছ-গাছড়া থেকে প্রাপ্ত এবং জীব-জন্তুর শরীর থেকে প্রাপ্ত ঔষধসমূহ। রসায়ন হল বিভিন্ন মৌলিক বা যৌগিক পদার্থ থেকে উৎপন্ন লবণাদি যা বর্তমানে হোমিওপ্যাথিক বা বায়োকেমিক ঔষধ থেকে পাওয়া যায় আর প্রাণায়াম—যা উপযুক্ত গুরুর কাছ থেকে শিখে অভ্যাস করতে হয়। এদের সবগুলির যথাযথ প্রয়োগ হলে তবেই ত্রিবিধ ক্লেশ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।