প্রশ্ন—বৈষ্ণব দর্শন প্রসঙ্গে আপনার পূর্ববর্তী আলোচনা শুনে আমার খুবই ভাল লেগেছে, এখন আপনি অনুগ্রহ করে আমাকে শ্রীকৃষ্ণতত্ত্ব সম্পর্কে কিছু বলুন ।
উত্তর—প্রিয় আত্মন্—যেমন মনে কর—স্বরবর্ণ না শিখলে যুক্তাক্ষর শেখা যায় না তদ্রূপ আত্মতত্ত্ব না জেনে শ্রীকৃষ্ণতত্ত্ব জানা সম্ভব নয় । একমাত্র আত্মতত্ত্বজ্ঞ ব্যক্তিগণই শ্ৰীকৃষ্ণতত্ত্ব বুঝতে পারেন ।
প্রশ্ন—তবুও আপনার শ্রীমুখ হতে শ্রীকৃষ্ণ-প্রসঙ্গ শুনবার প্রবল আগ্রহ হচ্ছে । আপনি ঐ বিষয় সম্বন্ধে কিছু আলোচনা করুন।
উঃ—প্রিয় আত্মন্—সংস্কৃত ভাষায় ‘কৃষ্,’ ধাতুর ‘নক্’ প্রত্যয় যোগ করে ‘কৃষ্ণ’ শব্দটি নিষ্পন্ন হয়। ‘কৃষ্’ ধাতুর অর্থ—কর্ষণ অর্থাৎ চাষ করা । যেমন জমিতে ফসল উৎপন্ন করতে হলে কর্ষণ করতে হয়, তদ্রূপ আমাদের মানব-দেহরূপ জমিতে ভগবৎ তত্ত্বের বোধে বোধ করতে হলে অধ্যাত্ম-সাধনারূপ আত্মার কর্ষণ প্রয়োজন । তাই মহাসাধক রামপ্রসাদ গানের ভাষায় বলেছেন :—
“মনরে কৃষি কাজ জান না
এমন মানব জমিন রইল পতিত
আবাদ করলে ফলত সোনা।”
সুতরাং মানুষকে চিত্তবৃত্তির চাষ করতে হবে। এখন বোঝা দরকার—এই চিত্তবৃত্তি কি ? যোগশাস্ত্রমতে বলা হয়—বিষয় সম্পর্ক হতে চিত্তের যে পরিণতি ঘটে তারই নাম বৃত্তি । সুতরাং এখন তুমি নিশ্চয় বুঝতে পারলে যে, বিষয় অর্থাৎ পার্থিব বস্তুর সঙ্গে ইন্দ্রিয়ের মাধ্যম দিয়ে মনের সম্বন্ধ হলে চিত্তে যে ভাব জাগ্রত হয়। তাই চিত্তবৃত্তি নামে পরিচিত। আর যে শক্তি দ্বারা চিত্তের বৈপরীত্য আসে, তাকে বল। হয় কর্ষণ করা। আর যিনি কর্ষণ করেন, তিনি হলেন শ্রীকৃষ্ণ। এই শ্রীকৃষ্ণ অনন্ত শক্তিমান। তিনি আপন শক্তিবলে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অখিল আত্মাকে আকর্ষণ করছেন। তিনি অনন্ত শক্তিধর এবং জগদাকর্ষণকারী, এইজন্যই তিনি কৃষ্ণ। যিনি এ রিপু এবং ইন্দ্রিয়সমূহকে পার্থিব ভোগ বা বিষয় বাসনা হতে আকর্ষণ করে ঈশ্বর-উন্মুখী করছেন সাধকের জীবনে, তিনিই হলেন শ্রীকৃষ্ণ। তিনি সর্ব চিত্ত-আকর্ষক—তাই শ্রীকৃষ্ণ, তিনি সর্ব চিত্তহর—তাই শ্রীহরি। তিনি পুরুষ ও প্রকৃতির মিলিত বিগ্রহ, তাই আনন্দ রসঘন মূর্তি । তিনি কোন ব্যক্তি বিশেষের নন, তিনি বিশেষ কোন সম্প্রদায়, গোষ্ঠী বা শ্রেণীরও নন । তিনি সর্বজনীন, স্বাধীন, সনাতন, শাশ্বত ও চিরন্তন। তিনি স্থাবর, জঙ্গম, উদ্ভিদ, কীট, পতঙ্গ, পক্ষী, পশু, মানব, দেব—ইত্যাদি সমস্ত প্রাণীর প্রাণস্বরূপ এবং সমস্ত জীবেরই অন্তরাত্মা। জড় ও জঙ্গম সমূহে — সর্বোপরি তিনি ব্যাপ্ত হয়ে বিরাজমান আছেন । তিনি সর্বজীবের আধার, সমস্ত লোকের আরাধ্য। তিনি সমস্ত কিছুর উৎস, আধার ও অস্তিত্ব। তিনি ছাড়া কোন কিছুর অস্তিত্ব অসম্ভব। তিনি সচ্চিদানন্দ, অর্থাৎ পূর্ণ সত্য, পূর্ণ-চৈতন্য ও পূর্ণ-আনন্দ । তিনি সাধারণ বাক্য-মনের অগোচর, সাধারণ পার্থিব চিন্তাধারার অতীত, এইজন্য বিষয়াসক্ত চিত্তে তাঁকে অনুভব করা যায় না। অজ্ঞান, অভিমানী এবং অহংকারী মানবগণ তাঁকে বোধে বোধ করতে পারে না । কেবল তাঁকে অন্তর দ্বারাই অপরোক্ষ অনুভব করতে পারা যায়। সাধনাদ্বারা চিত্তশুদ্ধি হলে অর্থাৎ স্বার্থ-অভিমান এবং অজ্ঞান দূরীভূত হলে অন্তঃকরণ শুদ্ধ হয় আর ঐ নির্মল অন্তরেই তাঁর অপরোক্ষ অনুভব হয়।
প্রিয় আত্মন্, চিত্তের স্বার্থরূপ ক্লেদ, অভিমানরূপ কল্মষ এবং অজ্ঞানরূপ অন্ধকার দূরীভূত না হলে তাঁকে বোধে বোধ করা খুবই দুরূহ। কারণ যার স্বরূপ পূর্ণসত্য, পূর্ণচৈতন্য এবং পূর্ণ-আনন্দ— তাঁকে পার্থিব চক্ষু আদি ইন্দ্রিয়সকল কেমন করে বোধে বোধ করবে ? আর তিনি পাঞ্চভৌতিক পদার্থ নন যে প্রমাণ দ্বারা ইন্দ্রিয়- জড় গোচর করা যাবে।
সুতরাং তাঁকে একমাত্র অন্তঃকরণ দ্বারাই বোধে বোধ করা যায়। কেবলমাত্র আত্মতত্ত্ববিদগণই তাঁকে অপরোক্ষ অনুভব করতে পারেন। তিনি রসঘন বিগ্রহ, তাই সাধকগণ তাঁকে ‘রসরাজ’ বলেন। তিনি চিরকিশোর অর্থাৎ কখনই পুরাতন হন না। এই রসরাজ সচ্চিদানন্দ শ্রীকৃষ্ণকে একমাত্র ভাবনাচতুর ভক্তগণই আস্বাদন বা বোধে বোধ করতে পারেন। ভক্তের রসমাধুর্য ভক্তিধারা অন্তঃসলিলা ফল্গুধারার মতো । এইজন্য ভগবৎ নাম বা লীলাশ্রবণ মাত্রই মহাবায়ুর হিল্লোলে ভক্তের হৃদয়ে ভক্তিরসের প্লাবন উপস্থিত হয়। তখন ভক্তের সমস্ত শরীর, মন, প্রাণ ভক্তিভরে থরথর করে কেঁপে উঠে। অন্তরে হতে থাকে মাধুর্য রসের অপুর্ব উল্লাস। আর এটাই হল মধুর হতেও মধুরতর অপ্রাকৃত চিন্ময় বৃন্দাবন লীল৷ ৷ এইজন্য ভাগবতে শ্রীল শুকদেব গোস্বামী বলেছেন-
“পিবত ভাগবতং রসামালয়ং
মুহুরহো রসিকা ভুবি ভাবুকাঃ ॥”
অর্থাৎ—“(হে) রসবিশেষ ভাবনাচতুর রসজ্ঞ ব্যক্তিগণ, এই রসময় ফল প্রলয় পর্যন্ত পান করুন।”
প্রশ্ন—আপনার নিকট শ্রীকৃষ্ণ নামের তাৎপর্য এবং পাধ্যাত্মিক মর্ম অবগত হয়ে আমার অশেষ আনন্দ হচ্ছে। যদি অনুগ্রহ করে ভাগবতের শ্রীবৃন্দাবন লীলার আধ্যাত্মিক তাৎপর্য বিশদভাবে বুঝিয়ে বলেন, তাহলে আমি ধন্য হব ৷
উত্তর— প্রিয় আত্মন—এখন আমি ঐ বৃন্দাবন লীলারই আধ্যাত্মিক তাৎপর্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করছি, তুমি মনোযোগপূর্বক শ্রবণ কর ।
প্রত্যেক মানবের আপন হস্তের সাড়ে তিন হস্ত পরিমাণ তার আপন শরীর আর এক হস্ত সমান চব্বিশ আঙ্গুল । সুতরাং মোট সাড়ে তিন হস্তের পরিমাণ চুরাশি আঙ্গুল । এটাই হল চুরাশি ক্রোশ শ্রীবৃন্দাবন। সুতরাং চুরাশি আঙ্গুল পরিমিত মানবশরীর হল চুরাশি ক্রোশ বৃন্দাবন । আর নন্দের নন্দন শ্রীকৃষ্ণ হলেন পরমাত্মা । ইনি নন্দের আলয়ে অবস্থান করেন, অর্থাৎ সচ্চিদানন্দরূপ নন্দালয়ে অবস্থান করেন। তাঁর মাতার নাম যশোদা—যিনি অহৈতুকী প্রেম- ভক্তিরূপ যশোদাম অর্থাৎ রজ্জু দ্বারা পরমার্থরূপী শ্রীকৃষ্ণকে বন্ধন করে ছিলেন। ইনি বাৎসল্য রসপূর্ণা প্রেম-ভক্তির প্রতীক। আর অহৈতুকী প্রেম-ভক্তি হল রজ্জুস্বরূপ। তাই বাৎসল্য প্রেমে যিনি শ্রীকৃষ্ণকে বন্ধন করেন, তিনিই হলেন যশোদা। শ্রীকৃষ্ণ সংসাররূপ গোচারণ ক্ষেত্রে জীবরূপ গোচারণ খেলা খেলে বেড়ান। এটাই হল গোষ্ঠলীলা। বৃন্দাবনের গাভীগুলি, যথা-শ্যামলী, ধবলী, কালী, কাপালী এখনও বর্তমান । মানবদেহের ষড়রিপু হল সেই গাভীগুলি আর পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ তাদের রক্ষপাল। চুরাশি আঙ্গুল পরিমিত এই মানবদেহ হল এদের চারণক্ষেত্র । কৃষ্ণভক্তির উদ্দীপনাস্বরূপ বংশীর ধ্বনিতে ঐ গাভীগুলি কৃষ্ণ-উন্মুখ হয়ে ধাবিত হয় আর পরমেশ্বরের প্রতি ধাবিত হয়ে উৎকর্ণ হলেই এদের জাগরণ ঘটে থাকে। কালিদহ হল কামসমুদ্র এবং দুর্দান্ত কাম হল সেখানে কালীয়নাগ। শ্রীকৃষ্ণ পূর্ণ প্রেমস্বরূপ, এইজন্য কালিদহে নেমে কামরূপ কালীয়নাগকে দমন করেন এবং তার মস্তকে বংশীধ্বনি করে নৃত্য করেন। তিনি ব্রজবাসীদের ঘরে ঘরে মাখন চুরি করে বেড়ান, তাই মাখন চোর। এই মাখন হল ভক্তের অন্তরের অন্তস্তল হতে মন্থনজাত বিশুদ্ধ নির্মল প্রেম-ভক্তি। এই মাখনরূপ ভক্তির সারাংশ মাধুর্যরস তিনি চুরি করেন, তাই মাখনচোরা । তিনি পূর্ণাঙ্গ ভক্তের ভক্তির পাত্র। এই কারণে প্রকৃত ভক্ত এই প্রেম-ভক্তি তাঁকে অকাতরে দান করে থাকেন। বাৎসল্যভাবে ভাবিত ব্রজবাসী রমণীগণ তাঁকে মাখন খাওয়ান। তিনি থাকেন যমুনাতীরে দ্বাদশ বনের ভিতর সেই কদম্ববৃক্ষে। সেখানে তিনি বংশীধ্বনি করেন অর্থাৎ হৃদয়-যমুনাতীরে দ্বাদশদল পদ্মের কর্ণিকা অভ্যন্তরে ভাবরূপ কদম্বের মূলে উদ্দীপনাস্বরূপ বংশীরব করেন ।
প্রিয় আত্মন্, এখন নিশ্চয় বুঝতে পারছ—হৃদয়রূপ যমুনাতীরে দ্বাদশদল মহাপদ্মে ভাবরূপ কদম্ববৃক্ষে অধিষ্ঠিত হয়ে উদ্দীপনাস্বরূপতিনি যে বংশীধ্বনি করেন, সেটাই ভক্তেরভক্তিভাবেরউদ্দীপনা ৷
‘ধীরে সমীরে যমুনা তীরে
কর মন কৃষ্ণ ধ্যান ।’
তুমি নিশ্চয় বাউল গানের মধ্যে শুনেছ :
‘এখনো সেই বৃন্দাবনে
বাঁশী বাজেরে—
বাঁশীর সুরে যমুনার জল
উজান বহেরে।’
আজও প্রেমিক ভক্তগণ ঐ বংশীধ্বনি শ্রবণ করে আকুল হন এবং ভাবাবেগে সমাধিস্থ হয়ে পড়েন। তিনি কোন রূপ ও রঙের মধ্যে সীমাবদ্ধ নন, এজন্য তাঁর রূপ কালো । তিনি অসীম হয়েও সীমার আলিঙ্গনে ধরা দেন, সেইহেতু তাঁর পীতবসন । তিনি অযোনি সম্ভূত—সাধারণ নর-নারীর মিলনাত্মক শৃঙ্গার শক্তির অতীত এবং বাহ্য ইন্দ্রিয় দ্বারা অনুভূত নন। সেইজন্য তাঁর মস্তকোপরি চূড়াতে ময়ূরপুচ্ছ । তিনি পার্থিব অলংকার দ্বারা সজ্জিত হবার অতীত, এইজন্য তাঁকে জাগতিক কোন ভূষণ দ্বারা ভূষিত করা যায় না । আর সেইহেতু তিনি বিনোদবিহারী। তাঁর চূড়া গুঞ্জামালা দ্বারা শোভিত। তিনি ভক্তবাঞ্ছা কল্পতরু । ভক্তের মনোবাসনা সর্বদা পূরণ করেন, তাই তাঁর চূড়া বামদিকে হেলান । তিনি রসময় রসিক, পূর্ণাঙ্গ ভক্তের আরাধ্য বিষয়। তাঁর রসময় ভুবন ভুলানো রূপ একবার যিনি প্রত্যক্ষ করেছেন, তিনি সেই ভাবসাগরে নিমজ্জিত হয়েছেন। তাঁর জীবত্বের বা জৈবিক অভিমানের মৃত্যু হয়েছে ।
প্রিয় আত্মন্—যেমন সূর্যালোক ব্যতীত সূর্যকে প্রত্যক্ষ করা যায় না, তদ্রূপ পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের কৃপা ব্যতীত কৃষ্ণতত্ত্ব বুঝা যায় না। সাধু, গুরু ও বৈষ্ণবের কৃপা হলেই এই কৃষ্ণতত্ত্ব জানতে বা বুঝতে পারা যায়।
প্রশ্ন—আপনার পূর্বোক্ত আলোচনা হতে শ্রীকৃষ্ণতত্ত্ব ও শ্রীবৃন্দাবনতত্ত্ব অদ্ভুত ও সুন্দরভাবে বুঝতে পারলাম । এখন যদি অনুগ্রহ করে ব্রজেশ্বরী শ্রীরাধারাণী সম্পর্কে কিছু বলেন তো ধন্য হব ।
উত্তর—প্রিয় আত্মন্, ‘রাধা’ শব্দের অর্থ হল ‘যা আরাধয়তে সা রাধা’, অর্থাৎ যিনি আরাধনা করছেন, তিনিই শ্রীরাধা। যিনি সেই পরতত্ত্বকে লাভ করবার জন্য একান্তভাবে আরাধনাতে মগ্ন, তিনি শ্রীরাধাস্বরূপ। ‘রাধা’ অর্থে কোন স্ত্রীলোক নয় । পূর্ণাঙ্গ ভক্তই শ্রীরাধা নামে পরিচিত। শ্রীরাধিকা হলেন শ্রীকৃষ্ণের হ্লাদিনী শক্তি। বৈষ্ণবগণ বলেন—শ্রীরাধা হলেন শ্রীকৃষ্ণের প্রণয় বিকার—স্বরূপশক্তি হলাদিনী যাঁর নাম।
প্রশ্ন— অনেকে বলে থাকেন—লক্ষ্মীকে মা বলা হয়, সীতাকেও মা বলা হয়, কিন্তু শ্রীরাধিকাকে কেন মা বলা হয় না ?
উত্তর— প্রিয় আত্মন্–এর কারণ হল শ্রীরাধিকা কোন মেয়েমানুষ নন। তিনি শ্রীকৃষ্ণের প্রণয় বিকার—স্বরূপশক্তি—হ্লাদিনীতত্ত্ব। আহ্লাদে কৃষ্ণ—তাই হ্লাদিনী, শ্রীকৃষ্ণের আনন্দদায়িনী শক্তি। যিনি শ্রীকৃষ্ণকে আনন্দ প্রদান করেন। এজন্য বৈষ্ণবগণ বলেন–রাধার স্বরূপ কৃষ্ণপ্রেম কল্পলতা। এখানে জীবাত্মা- শ্রীরাধা, পরমাত্মা-শ্রীকৃষ্ণ । শ্রীরাধাই জীবাত্মার স্বরূপ । জীবাত্মা ব্যতীত পরমাত্মার উৎকর্ষ নয়। তাই পরমাত্মা শ্রীকৃষ্ণ জীবাত্মারূপ শ্রীরাধাতে কর্ষণ করেন নিজেই নিজেকে আস্বাদন করবার জন্য । কারণ ভক্ত ব্যতীত ভগবানের মহিমা কোথায় ? জীবাত্মা ও পরমাত্মার মিলনেই রাধা গোবিন্দের মিলন এটা সচ্চিদানন্দ সাধনার একমাত্র লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য ।
তুমি পুর্বে নিশ্চয় শুনেছ যে, বৃন্দাবনে ব্রজলীলায় শ্রীকৃষ্ণ শ্রীরাধার সঙ্গে একত্রে মধুর রাসলীলা করেছিলেন একদিকে শ্রীকৃষ্ণের অষ্টসখা এবং অপরদিকে শ্রীরাধার অষ্টসখী, সখা সখী যোগ জন সহ একসাথে শ্রীরাধা-কৃষ্ণ রাসলীলা সম্পন্ন হয়েছিল । অর্থাৎ মানবদেহরূপ বৃন্দাবনে জীবাত্মারূপ শ্রীরাধার সঙ্গে পরমাত্মারূপ শ্রীকৃষ্ণের মিলন হয়েছিল। দেহবৃন্দের যড়রিপু এবং দশ ইন্দিয়— এই যোলজনকে একত্রিত করে যখন রাধাস্বরূপ জীবাত্মা কৃষ্ণস্বরূপ পরমাত্মার সঙ্গে একত্রে মিলিত হয় তখন তাকে বলা হয় রাধা-কৃষ্ণের মিলন । এটা সম্পূর্ণ অপ্রাকৃত এবং চিন্ময় ।
প্রিয় আত্মন, জীবাত্মার পরমাত্মাতে মিলনই হল। সচ্চিদানন্দ রাস। এটা সাধারণ নরনারীর প্রাকৃত ভালবাসা নয়। পরন্তু এটা জাগতিক কামনা-বাসনা-শূন্য বিশুদ্ধ নির্মল প্রেম। লাভ হলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে বোধে বোধ করা যায়। প্রিয় আত্মন, এখন এই পর্যন্ত থাক, পরের পরিচ্ছেদে এই ‘রাসতত্ত্ব’ সম্বন্ধে আরও বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হবে ।