গুরুমহারাজ:—ইতিহাস তো সেই কথাই বলে। তাছাড়া ইতিহাস ঘাঁটলে পাওয়া যায় যে, হজরত মহম্মদের বাবা-কাকারা অর্থাৎ তাঁর পূর্বপুরুষেরা তো ঐ মন্দিরের পুরোহিত ছিলেন এবং ওনারা মন্দিরে অবস্থিত মূর্তিগুলি পূজা করতেন। প্রকৃতপক্ষে ওটি মহাকাল মন্দির ছিল। মহাকাল থেকেই ‘মহাক্কা’ হয়ে ‘মক্কা’ কথাটি এসেছে। ওটি ছিল মক্কেশ্বর শিবের মন্দির বা মহাকাল মন্দির। ওখানে মূল শিবলিঙ্গ ছাড়া আরও ৪৮০ টি(মহাকাল মন্দিরে ছিল ৩৬০টি, বাকিগুলি পাশাপাশি মন্দিরগুলিতে ছিল) বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তি ছিল। হজরতের ছোটবেলা খুবই সাধন-ভজনে কেটেছে। উনি ভেড়া চরাতে চরাতে মেষপালকদের সঙ্গে চলে আসতেন হিমালয়ের প্রান্ত পর্যন্ত এবং ওখানেই বিভিন্ন যোগী সম্প্রদায়ের সঙ্গে ওনার যোগাযোগ ঘটে। এইজন্যেই হজরতের ছোটোবেলার ইতিহাস স্থানীয় মানুষের কাছে অজানা ছিল। তারপর যুবক বয়সে তিনি মক্কায় ফিরে যান এবং নতুন ধর্মমত প্রচার করতে থাকেন যা ওখানকার প্রাচীন ধর্মবিশ্বাসের বিরোধী। ফলে প্রথমে ওনাকে মক্কা ছেড়ে মদিনায় পালিয়ে যেতে হয়, পরে আলি এবং ওসমান নামে দুজন যোগ্য সহকারী পাওয়ায় উনি প্রথমে মদিনায় তাঁর ধর্মমত প্রচার করেন এবং ওখানকার মানুষকে প্রভাবিত করেন। এরপর উনি পুনরায় মক্কায় ফিরে আসেন। এখানে ছোটখাটো সংঘর্ষ ও হয়। ঐ সময় হজরতের নির্দেশে মহাকাল মন্দিরের সমস্ত মূর্তি আলি ও ওসমান ভেঙে ফেলেন। কিন্তু এমন কথিত আছে যে, ওনাদের একজন যখন পবিত্র শিবলিঙ্গ ভাঙতে যাবেন_ এমন সময় ওখানে উপস্থিত হজরতের ভাবসমাধি হয়ে যায় এবং ভাবস্থ অবস্থায় তাঁর মুখ থেকে ‘আয়াৎ’ (ঈশ্বরের বাণী ও উপদেশ) বেরোতে থাকে ! ওনার সেই কথাগুলির বাঙলা তর্জমা করলে হবে__ “দাঁড়াও, ঐ মূর্তিটিতে আঘাত কোরো না – এটি প্রাচীন পবিত্র পাথর। এতে মাথা দিয়ে শুয়ে পূর্ববর্তী নবীদের জ্ঞান হয়েছে । ওঁকে পবিত্রজ্ঞানে চুম্বন করো।”
হজরতের এই বিখ্যাত ‘আয়াৎ’ থেকেই আজও পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ ধর্মপ্রাণ মুসলমান ‘হজ’ উপলক্ষ্যে মক্কায় যায় এবং ঐ পবিত্র পাথরকে চুম্বন করে।
দক্ষিণভারতের শিবমন্দিরগুলিতে শৈবরা যে আচার-উপবাস পালন করে, হজ করতে গেলেও প্রায় সেইরকমই আচার পালন করতে হয় অর্থাৎ মস্তকমুণ্ডন, কাছাবিহীন কাপড় পরা এবং উত্তরীয় নেওয়া, প্রদক্ষিণ ইত্যাদি অনেক কিছু আচারের similarity পাওয়া যায়।