জিজ্ঞাসু :~ আপনার কাছে শুনেছি ত্রিবিধ শরীর রয়েছে ! কারণ শরীর, সূক্ষ্ম শরীর ও স্থূল শরীর ৷ কারণ থেকে আসে সূক্ষ্ম এবং সূক্ষ্ম থেকে স্থূলে রূপ পায়। কিন্তু সূক্ষ্ম থেকে স্থূল-টা কি করে হয় ?

গুরুমহারাজ : ~ কারণ-ই কার্য্যে রূপ নেয়, আর এটাই এই পৃথিবী গ্রহের নিয়ম ! যে কোনো কার্য্যের পিছনে কোনো না কোনো ‘কারণ’ থাকা অবশ্যম্ভাবী ! এই নিয়মেই ‘কারণ’ শরীর ‘সূক্ষ্মে’ রূপ নেয় ৷ এবার ‘সূক্ষ্ম’ থেকে ‘স্থূল’-এর কথাটা বলছি ৷ উদাহরণ হিসাবে বলা যায় – যেমন শক্তি (সূক্ষ্ম) যেভাবে বস্তুতে (স্থূল) রূপ নেয় ঠিক সেইভাবেই সূক্ষ্মদেহ – স্থূলদেহ প্রাপ্ত হয় ৷ উভয়ক্ষেত্রেই theory একই ৷ কিন্তু দেহের ক্ষেত্রে একটাই বিশেষ শর্ত রয়েছে – এটি হয়ে থাকে through জীবদেহ ! যেহেতু জীবের সূক্ষ্ণশরীর থেকে জীবদেহ‌ই হয়ে থাকে- তাই through জীবদেহ –ব্যাপারটা বুঝতে পারলে কি !!

জিজ্ঞাসু :~ আচ্ছা গুরুজী ! এই যে বলছিলেন – সূক্ষ্মদেহ থেকেই স্থূলদেহ ৷ তাহলে বিভিন্ন প্রাণীরও তো সূক্ষ্মদেহ রয়েছে ? আর সবসময়ে একই প্রাণীর সূক্ষ্মদেহ থেকে ওই বিশেষ প্রজাতির প্রাণীরই স্থূলদেহ হয় কি?

গুরুমহারাজ : ~ কারণ -> সূক্ষ্ম -> স্থূল – এইটা যেমন ক্রম তেমনি – স্থূল -> সূক্ষ্ম -> কারণ – এটাও একটি বিপরীত ক্রম ৷ অর্থাৎ কারণ থেকে কার্যে রূপ পাওয়া সূক্ষ্মদেহ এবং স্থূলদেহ লাভ করার পর তার মনোজগতের ক্রিয়া এবং স্থূলশরীরের দ্বারা সংঘটিত ক্রিয়াদি-ই আবার পরবর্তী সূক্ষ্মশরীরে ক্রিয়াশীল হয় এবং তা আবার আরোও সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মরূপে কারণশরীরে বীজাকারে সঞ্চিত হয় ৷ ফলে সেখান থেকেই পরবর্তী শরীরের ভিন্ন ভিন্ন রূপরেখা তৈরি হয়।

জীবসকলের মধ্যে সর্বোন্নত শরীর বিশিষ্ট মানুষের এইজন্যেই স্বভাবটি সুন্দর হওয়া খুবই প্রয়োজন ৷ যে মানুষের স্বভাব সুন্দর – তার সবই সুন্দর হবে ৷ পরবর্তী শরীরও সুন্দর হবে ৷ কারণ কি বলোতো – ওই মানুষটির স্বভাব সুন্দর হওয়ায় ওর চিন্তার জগতে একটা ছন্দবদ্ধতা এসে যায়- আর সেই ছন্দই তার কারণশরীরেও একটা ছন্দবদ্ধতা, একটা harmony সৃষ্টি করে ! তাই ঐ কারণ যখন কার্যে রূপ নেয় অর্থাৎ স্থুলশরীর নেয় – তখন তা উন্নত আধার-ই হয়ে থাকে ৷

অপরদিকে যদি কোনো মানুষ ইতর স্বভাবের হয় – তাহলে সে পরবর্তী শরীরে ইতরযোনী প্রাপ্ত হোতে পারে ! মানুষের শরীর পেয়েও কোনো ব্যক্তির জীবনে যদি কুকুরের মতো স্বভাব হয় – তাহলে সে কুকুরযোনী প্রাপ্ত হবে ! যদি কোনো ব্যক্তির শুয়োরের মতো স্বভাব হয় – তাহলে সে শুয়োর হয়ে জন্মাবে ৷ এইরকমভাবে সব কাজে যদি লোকের ছিদ্র অন্বেষণ করা কারো স্বভাব হয় – তাহলে সে সরীসৃপ হয়েও জন্মাতে পারে ৷

তবে, কোনো ব্যক্তি অভিশাপগ্রস্থ হওয়ায় অথবা তার দ্বারা যদি মহাপাতক সংঘটিত হয়ে থাকে, তাহলে তা থেকেও মানব থেকে সে ইতরযোনী প্রাপ্ত হোতে পারে ৷ অবশ্য এই ব্যাপারটার theory আলাদা !

অভিশাপ থেকেও কোনো মানুষের জীবনে নানারকম বিপর্যয় নেমে আসতে পারে – কিন্তু সেক্ষেত্রে যে অভিশাপ দিচ্ছে তাকে দ্বিতীয় ব্যক্তি অপেক্ষা চেতনায় উন্নত হোতে হবে ! আর এই সমস্ত ক্ষেত্রে দুজনেই ভোগে অর্থাৎ আখেরে দুজনেই শাস্তি পায় – তাই হুট্ করে কাউকে অভিশাপ দেওয়া ভালো নয় ! এতে দ্বিতীয় ব্যক্তির ভোগান্তি হয় ঠিকই কিন্তু নিজেকেও ভুগতে হয় ৷ আর একটা কথাও এখানে বলা দরকার তা হোলো -যে কেউ যদি কোনো দুর্বল মানুষকে (সে যদি বাবা-মা বা কোনো আত্মীয় না হয়, তাহলেও) অকারণ উপেক্ষা, অবজ্ঞা বা অবহেলা করে, অত্যাচার বা নির্যাতন করে – তাহলে ওই সমস্ত মানুষের অন্তরে স্থিত অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে ! আর এমনটা হোলে সেখানে ওই সবল অত্যাচারীর চরম শাস্তি হয় ৷

আর মহাপাতকের কথা যেটা বলা হোচ্ছিলো, সেটি হোলো __পিতা-মাতা-গুরু বা গুরুপত্নীর প্রতি যদি অত্যন্ত গর্হিত আচরণ করা হয় , তখনই ‘মহাপাতক’ হয়, – আর মহাপাতকগ্রস্থ জীবের সাধারণ নিয়মে মুক্তি ঘটে না ৷ যখন কোনো না মহাপুরুষ জন্মগ্রহণ করেন .তখন তাঁর সান্নিধ্যলাভ করতে পারলে – সেই মহাপুরুষের কৃপায় ওই মহাপাতকীর‌ও মুক্তি ঘটে থাকে ৷৷